দরিদ্রদের কাছে নোট বাতিলের অর্থ দাঁড়িয়েছে কাজ বাতিল, খাদ্য বাতিল, জীবন বাতিল ... ...
- বিমুদ্রাকরণের কারণে ১০০ জনেরও বেশি অতি দরিদ্র পুরুষ, নারী, কৃষক এবং শ্রমিক মারা গেছেন।
- কৃষকরা নগদ টাকার অভাবে যথাসময়ে বীজ কিনতে পারেননি, নোট বাতিলের জন্য তাদের ফসল বিক্রি বা ঋণ শোধ করা সম্ভব হয়নি।
- অসুস্থ মানুষরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে টাকা জমা করতে পারেননি। গ্রামীণ ভারতে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা এই জন্য মারা যাচ্ছেন যে, শহরের হাসপাতালে যাওয়ার নগদ পয়সাটুকুও তাদের নেই।
- দিল্লীর কেবলমাত্র অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৪৮.৬৩ লক্ষ শ্রমিকের মধ্যে প্রায় সবাই কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসাধিক কাল পর্যন্ত কাজ হারিয়েছেন এবং তাদের মধ্যে এক বড় অংশই গ্রামে ফিরে গেছেন। প্রতিটি রাজ্যেই এরকম অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
- অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের পুরনো নোটে বেতন দেওয়া হয়েছে বা বেতন স্থগিত রাখা হয়েছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তের কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকরা যেখান থেকে এসেছিলেন সেখানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
- অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চা-বাগানের শ্রমিকদের অনাহারের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বিড়ি, নির্মাণ, বস্ত্র, পরিবহন, পোশাক, চামড়া, গয়নাগাটি, গৃহ পরিষেবা, কৃষি এবং অন্য সমস্ত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
- প্রবীণ নাগরিকরা পেনশন তুলতে না পারায় তাদের পক্ষে বাঁচাটা কষ্টকর হয়ে দেখা দিয়েছে।
- ছোট দোকানদার এবং রাস্তার বিক্রেতারা বড় বড় মল এবং খুচরো ক্ষেত্রের কর্পোরেট সংস্থাগুলোর কাছে নিজেদের ব্যবসা হারাচ্ছেন, কেননা তাদের পক্ষে 'নগদহীন' হওয়া সম্ভব নয়।
- কলেজ ও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ফি জমা দিতে পারছে না।
- অনেক মহিলাই বছর বছর ধরে কিছু নগদ টাকা জমিয়েছেন, কখনও কখনও তা করেছেন মদ্যপ স্বামীর বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দৃষ্টির আড়ালে। তাদের ঐ সঞ্চয় ছিল জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। সেই সঞ্চয় এখন জনসমক্ষে। এই ধরনের অনেক মহিলারই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই, আর তাই তারা তাদের সঞ্চিত টাকা পুরুষদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে নিজেদের সঞ্চিত অর্থের উপরই তাদের আর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।
প্রধানমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত করছেন যে দরিদ্রদের জনধন অ্যাকাউন্টগুলো কাজে লাগিয়ে কালো টাকা সাদা করা হচ্ছে, অথবা ভিখারিরা কার্ড ঘষা মেশিন ব্যবহার করছেন, আর এটা নির্মমতম ঠাট্টা হয়ে দেখা দিচ্ছে।
নোট বন্দীর পদক্ষেপ অর্থনীতিতে বড় অাকারের মন্থরতা এনেছে যার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে দেশকে -- এবং বিশেষভাবে দরিদ্র শ্রমিক ও কৃষকদের – দীর্ঘ, যন্ত্রণাদীর্ণ সংগ্রাম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।