নরেন্দ্র মোদী ও তার সরকার ফ্যাসিবাদের এক মহড়া হিসাবেও নোট বাতিল পদক্ষেপকে কাজে লাগাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে নরেন্দ্র মোদী আরবিআই, নিজের মন্ত্রীসভা ও সংসদের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থাগুলোকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি দেখতে চাইছিলেন যে প্রজাতন্ত্রের ওপর গোপনে গোপনে ধ্বংসাত্মক ও অগণতান্ত্রিক এক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে তিনি কতদূর যেতে পারেন।
গরিবরা বুঝতে শুরু করেছেন যে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ধনী ও দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে যাবে এবং তা দরিদ্রমুখী বলে মোদী যা বলেছিলেন তা আসলে মিথ্যা। আর তাই এখন আরএসএস বাহিনী গুজব ছড়াতে ব্যস্ত যে মোদী নাকি গরিবদের জন্য আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ হল পুরোপুরি ফাঁকা প্রতিশ্রুতি। বস্তুতপক্ষে মোদী ও তার সরকার এমএনআরইজিএ ও খাদ্য নিরাপত্তা সহ গরিবদের জন্য সমস্ত কল্যাণ প্রকল্পে কাটছাঁট করছে।
মোদী ভক্তরা ছাত্রদের দেশদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত করছে এবং মোদীকে সমালোচনা করায় ছাত্রদের পেটাচ্ছে। তারা সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করছে এবং যে মহিলারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন বা সমালোচনা করছেন তাঁদেরকে গালাগাল করছে। এখন বিপর্যয়কর নোট বাতিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করাটাও 'দেশদ্রোহিতা' বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। মোদীর নোট বাতিল সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করার জন্য দিল্লীর একজন ব্যক্তি লালন সিং খুসওয়াহাকে কিছু দুষ্কৃতি মারধোর করে।
সাংবাদিক রাভিস কুমার যেমন বলেছেন, যতই কষ্টভোগ করতে হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা চলবে না এবং সমস্ত নাগরিকদের অবশ্যই গাইতে হবে 'বাগোঁ মে বাহার হ্যায়’ ('এখন বইছে বসন্তের বাতাস / সুখী মোরা সকলে')। এক ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে প্রশ্ন করার মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। এটা যদি জরুরি অবস্থা না হয়, তবে সেটা কি?
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের জন্গণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যদি ৫০ দিন পরেও গরিবদের কষ্টভোগ করতে হয়, তাহলে সমগ্র দেশেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে জনগণ তাঁকে শাস্তি দেবেন। ৫০ দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু নোট বাতিলজনিত কষ্টভোগ স্থায়ী হয়ে আছে। আমরা রাস্তার মোড়গুলোতে জনশুনানি করব এবং প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকার জন্য বলব। যদি তিনি জনগণের ক্রোধের মুখোমুখি হতে সাহস না করেন তবে আমরা তাঁর কুশপুতুল পোড়াব।
নোট বাতিল সিদ্ধান্ত দেশের কাছে, দেশের অর্থনীতির কাছে, গরিবদের কাছে এক বিপর্যয় নামিয়ে আনার চেয়ে কম কিছু নয়। যারা কোনোক্রমে জীবনধারণ করছিল, তাদের নিস্বঃ করে নিদারুণ দারিদ্রতার সীমায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কাজ হারিয়ে, চিকিৎসা ও পড়াশোনার খরচ যোগাতে না পেরে, অনাহারের মুখে দাঁড়িয়ে জনগণ মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই বিপর্যয়কর সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব নিতে হবে। যখন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে, তখন প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এখন নোট বাতিলের মতো বিপর্যয়ে, যা মোদী নিজের হাতেই সৃষ্টি করেছেন, জনগণ নিজেদের কোনো দোষ ছাড়াই যে বিপর্যয় ও ক্ষতির মুখে পড়লেন তার জন্য সরকারকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সর্বোপরি, সরকারকে অবশ্যই কালো টাকার মজুতদারদের প্রকৃত অর্থেই আঘাত করতে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে, ‘নোট বাতিল'-এর ধূম্রজালের আড়ালে দুর্নীতিগ্রস্তদের রক্ষা করা নয়।
সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে --
• নোট বাতিল বিপর্যয়ের জন্য প্রতিটি নাগরিককে ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
• সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও খাদ্য দিতে হবে।
• সমস্ত কৃষকের ঋণ এবং স্কুল-কলেজে ছাত্রদের ফি মকুব করতে হবে।
• ব্যাঙ্কের ঋণখেলাপিদের ও বিদেশী ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকার মালিকদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
• রাজনৈতিক পার্টিগুলোর কাছে আসা টাকার উৎস জনসমক্ষে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
• মোদী সরকার কেন এখনও একজন লোকপাল নিয়োগে ব্যর্থ হল? আর দেরী না করে লোকপাল নিয়োগ করা হোক।