সরকার এবং তার সাথে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা আমাদের বলার চেষ্টা করছে যে নগদ অর্থ খারাপ – নগদ ব্যবস্থা দুর্নীতিতে উৎসাহ জোগায়। এটা একেবারে মিথ্যা কথা। নাইজিরিয়া পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা নগদহীন অর্থনীতিগুলোর অন্যতম – এবং সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনীতিগুলোর মধ্যেও পড়ে। ভারতের জিডিপিতে নগদের অনুপাত ইউরো অঞ্চলের দেশগুলো থেকে খুব একটা বেশি নয়। শুধুমাত্র নগদ অর্থের প্রবাহকেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করাটা যুক্তিহীন এবং ভিত্তিহীন।
নগদ অর্থকে দুষিত বা 'নোংরা' রূপে অভিহিত করে মোদী সরকার গোটা অসংগঠিত ক্ষেত্রটাকেই অপরাধপ্রবণ রূপে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে -- এবং এইভাবে যে দরিদ্ররা অসংগঠিত ক্ষেত্রে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদেরও ঐভাবে দেখাতে চাইছে।
ডিজিটাল ব্যবস্থায় হ্যাকিং, চুরি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের শিকার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সর্বদাই রয়েছে। যারা পেটিএম ব্যবহার করেন তাদের কারুর কারুর হাতে ঐ সংস্থার প্রতারিত হওযার ঘটনার তদন্ত সিবিআই চালাচ্ছে। পেটিএম এবং এই ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেটগুলো যদি নিজেদের টাকাকে সুরক্ষিত করতে না পারে তাহলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা কিভাবে নিজেদের অর্থকে নিরাপদ মনে করবে? এই ধরনের অসুরক্ষিত ওয়ালেটগুলোতে টাকা রেখে দরিদ্রতর ব্যবহাকরারীরা কি তাদের কষ্টার্জিত টাকাকে বিপন্ন করে তোলার কথায় আমল দিতে পারেন?
যৌনকর্মী এবং পাচার হওয়া মানুষের ওপর প্রতিক্রিয়া
নোটবন্দী দরিদ্র এবং নিপীড়িত সম্প্রদায়গুলোকে আরও দরিদ্র এবং টিকে থাকার জন্য আর মরিয়া করে তুলেছে। এর পরিণতিতে অল্প বয়সী মেয়েদের যৌনকর্মী হয়ে ওঠার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ব্যবসায় রত যৌনকর্মীরা ধারে বা বিনা পয়সায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দালালরা যৌনকর্মীদের ধারে কাজ করতে বাধ্য করছেন – যেটা নোট বন্দীর কারণে যৌনদাসত্ব ছাড়া অন্য কিছু নয়।
যৌনকর্মীরা এবং পাচার হওয়া মেয়েদের সাধারণভাবে কোনো পরিচিতিপত্র থাকে না যা দিয়ে তারা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, কাজেই নগদে জমা তাদের সঞ্চয়কে বদলে নতুন নোট পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কলকাতাস্থিত আন্দোলনের কর্মী উর্মী বসু বলেছেন, “হাজার হাজার এমন মেয়ে রয়েছে যাদের ব্লাউজের মধ্যে গুঁজে রাখা কয়েক শত টাকা ছাড়া কোনো নথি নেই, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই,” যার অর্থ তাদের জমা নগদ টাকা রাতারাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া।