প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মজুরি নগদহীনভাবে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হবে বা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হবে, যার লক্ষ্য ন্যূনতম মজুরি প্রদানকে সুনিশ্চিত করা। শ্রমিকরা জানেন এটা ডাঁহা মিথ্যা। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লীতে নিরাপত্তারক্ষী ফার্মগুলোর ঠিকাদাররা নিরাপত্তা কর্মীদের এটিএম কার্ডগুলো নিজেদের কাছে রেখে দেন এবং সেগুলো দিয়ে টাকা তোলেন, এবং সেটা করেন সরকারী হারে 'ন্যূনতম মজুরি' জমা করার পরও। এইভাবে 'নগদহীন' ব্যবস্থাতেও ন্যূনতম মজুরির চুরি অব্যাহত রয়েছে!
আমরা আমাদের টাকা কিভাবে খরচ করব সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে কর্পোরেট। এর মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হতে পারে : কয়েক বছর আগে ভিসা, মাস্টারকার্ড ইত্যাদিরা উইকিলিকসকে অনুদান দেওয়া থেকে জনগণকে আটকায়, যে ইউকিলিকস সারা দুনিয়ার অনেক শক্তিশালী সরকারের দুর্নীতি ও অপরাধকে উন্মোচিত করেছিল!
আমাদের ব্যয়ের ওপর কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের আরও অর্থ হল এই যে, কোনো অর্থনৈতিক সংকটে আমরা নিজেদর সুরক্ষিত রাখতে পারব না। বিনয় শ্রীনিভাসা যেমন দেখিয়েছেন, “আজ যখন আমরা কোনো ব্যাঙ্কের পতন ঘটতে দেখি, তখন আমরা আমাদের টাকা তোলার জন্য ছুটোছুটি করি। কিন্তু সমস্ত অর্থই যদি ডিজিটাল হয় – সেক্ষেত্রে আমরা টাকা তুলব কিভাবে? আজ যদি সুদের হার কমে যায়, আমরা টাকা তুলে নিজেদের কাছে নগদে রাখতে পারি। কাল যখন সমস্ত অর্থই বৈদ্যুতিনভিত্তিক হয়ে যাবে -- তখন আমরা কম বা ঋণাত্মক সুদের জন্য মার খেতে পারি (ইউরোপের কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে) অথবা জমা টাকা খরচ করে ফেলতে হবে! সমস্ত অর্থ বৈদ্যুতিনভিত্তিক হয়ে গেলে, আমরা ঐ ধরনের উপরি স্তরের অর্থনৈতিক কৌশলবাজি চালাতে সরকারকে অবাধ ক্ষমতা দিয়ে দেব।"
আমরা হয় নির্মম বা নিস্পৃহ হব এবং মোদীর এই অবাস্তব দাবিকে বিশ্বাস করব যে, ভারতে ভিখারিদেরও কার্ডঘষা মেশিন আছে। আর আমাদের কোনো মানবিক বোধ যদি অাদৌ থাকে তাহলে আমরা জানব যে, ভিখারিদের কথা তো ওঠেই না, এমনকি দরিদ্র বিক্রেতা এবং দোকানদার ও কৃষকদেরও 'নগদহীন' ব্যবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। ফ্রান্সে হৃদয়হীন রাণী ম্যারি অ্যানটয়নে রুটি চাওয়া অনাহারগ্রস্ত মানুষদের দেখে বলেছিলেন, “ওদের যদি রুটি না থাকে তাহলে ওরা কেক খাচ্ছে না কেন?” ভারতের ম্যারি অ্যানটয়নে শ্রীযুক্ত মোদী ভারতের দরিদ্রদের সম্পর্কে বলছেন, “ওরা যদি নগদ টাকা না পায়, তবে ওরা নগদহীন হয়ে যাচ্ছে না কেন?” আমাদের কিন্তু ম্যারি অ্যানটয়নে বা মোদীর মতো হলে চলবে না। আসুন জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া 'নগদহীন ব্যবস্থাকে' দরিদ্রদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ বলে চিনে নিয়ে সেটার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
থিরুবনন্তপুরমের মাছ বিক্রেতা মেয়ে টেরেসা এইজন্য বিচলিত হয়ে পড়ে যে, মাছ কিনতে চাওয়া খরিদ্দারদের কাছে শুধু ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট রয়েছে। "এই নোটগুলো নিয়ে আমি কি করব? আমি যদি এগুলো নিই, ওগুলো পাল্টাতে আমার প্রচণ্ড অসুবিধা হবে। আর আমি যদি ঐ নোটগুলো না নিই তাহলে কাল আমি মাছ কিনতে পারব না। আমি ঠিক করেছি, যারা বৈধ টাকা নিয়ে আসবে আমি শুধু তাদেরই মাছ বিক্রি করব। আমি এক কেজি সিয়ার মাছ বিক্রি করেছি ২৫০ টাকায়, যদিও ঐ মাছের গড়পড়তা দাম কিলো প্রতি ৫০০ টাকা ও তার বেশি। কাল (শনিবার) থেকে আমি শুধু কম দামের মাছ নিয়ে আসব যা ১০০ টাকার নোট ও অন্যান্য বৈধ মুদ্রা দিয়েই কেনা যাবে,” বললেন ক্রুদ্ধ টেরেসা।
মাছ ভিত্তিক প্রথাগত ক্রিয়াকলাপ ক্রমেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনলাইনে কারবার চালানো কিছু কারবারীর মাছ বিক্রি চড়চড় করে বেড়ে উঠেছে।