(আগস্ট ১৯৯৫ সালে ডিফু সম্মেলনে বিতর্ক চলাকালীন হস্তক্ষেপ করার সময়ে যে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন – তার সংক্ষিপ্তসার)
আমার মতে প্রধান বিষয় হল, আমাদের পার্টির মধ্যে এক ধরনের বিশেষ সমস্য থাকছে। আমি মনে করি যে এক ধরনের প্রবণতা থাকছে, যারা মনে করেন যে রাজনৈতিক বিষয়গুলি ঠিকঠাক থাকলে সাংগঠনিক বিষয়গুলিও স্বাভাবিকভাবে, আপনা-আপনি, কিছুটা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তাকে অনুসরণ করবে। এরকম ভাবনা আসতে পারে, আমাদের পার্টির ‘অত্যধিক রাজনৈতিক চরিত্রধর্মী’ হয়ে ওঠা অথবা এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় আমাদের পার্টি আত্মপ্রকাশ ঘটানোর ফলে সাংগঠনিক বিষয়গুলি সম্পর্কে অবহেলা করা আমাদের পার্টির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। আর যখনই আমরা সংগঠনকে সংহতকরণের কথা বলি, সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলি, তখনই আমাদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। কেউ কেউ বলতে থাকেন যে রাজনীতি সঠিক থাকলে বাকি সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক গতিতে, নিজস্ব নিয়মেই তার পিছন পিছন চলবে। অবশ্য আমরা কমিউনিস্টরা জানি যে যদি আমাদের রাজনৈতিক লাইন সঠিক থাকে এবং আমরা যথাযথ রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকি তবে তা পার্টির সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হবে। কিন্তু আমি মনে করি যে তা কোনো স্বয়ংচালিত প্রক্রিয়ায় হবে না। সাংগঠনিক সমস্যাগুলি এক স্বাধীন সত্তা হিসাবেই থাকে। সংগঠন হল এক স্বাধীন বর্গ। আর সংগঠনকে ঠিকঠাক করতে গেলে, বোধহয়, আমাদের কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ, নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখনও কখনও বিশেষ সম্মেলনও করতে হয়। তাই শুধুমাত্র এই প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের এই বিশেষ সাংগঠনিক সম্মেলন করতে হচ্ছে।
যখনই আমরা সাংগঠনিক সম্মেলন করার কথা বলি, স্বাধীন এক আলোচন্যসূচি হিসাবে সাংগঠনিক প্রশ্নগুলিকে সমাধানের কথা ভাবি তখন অনেকেই অনেক প্রতিরোধ সৃষ্টি করে থাকেন। এমনকি এই সম্মেলনেও এমন মতামত উঠে এসেছে যে সম্মেলনকে নতুনভাবে নামাঙ্কিত করা হোক। কেউ কেউ বলেছেন যে মতাদর্শগত সাংগঠনিক সম্মেলন হিসাবেই এই সম্মেলনের নামকরণ করা উচিত। তাই আমি মনে করি যে এটি আমাদের পার্টির মধ্যে এক ধরনের নির্দিষ্ট সমস্যা। এই বিশেষ প্রবণতা রাজনীতি ও রাজনৈতিক সংগ্রামের নামে সাংগঠনিক প্রশ্নকে খাটো করে দেয়। এইভাবে এই প্রবণতা রাজনীতি ও সংগঠনকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বুলিসর্বস্বতার রূপ নিয়ে হাজির হয়।
আমি প্রায়শই এমন কিছু লোকজনকে দেখেছি যারা সাংগঠনিক প্রশ্নে, পার্টি গঠনের প্রশ্নে গুরুত্ব দেন না, পার্টি ও সাংগঠনিক কাজে যারা আদৌ মনোযোগী নন, এরাই আবার রাজনীতি ‘প্রচার’ করতে ভালোবাসেন। প্রায়শই তারা যে সমস্ত বুলি আওড়ান তার নমুনা হল : ‘কেন আপনারা সংগঠনের কথাবার্তা বলেন?’ ‘শুধু রাজনীতির কথা বলুন’ ইত্যাদি। তাই রাজনীতি প্রায়শই তাদের কাছে একধরনের বাহানা, একধরনের ছুতো হয়ে দাঁড়ায়। আমার মনে হয় এই প্রবণতাকে মোকাবিলা করতে এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে। আমাদের পার্টি সংগঠনকে গড়ে তুলতে আন্তরিক প্রয়াস চালাতে হবে। আর এই জন্যই এই সম্মেলন সংগঠিত করা হচ্ছে। আমাদের হাতে পেশ করা দলিলকে কেন্দ্র করে সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার আমাদের ফিরে যেতে হবে এক বিশেষ বার্তা নিয়ে। কিন্তু আমাদের চিন্তার মধ্যেই যদি দুর্বলতা থেকে যায় তবে আমরা পার্টি সংগঠনকে ঠিকঠাক ও শক্তিশালী করতে পারব না।
এবার আসা যাক গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার বিষয়ে। এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ নিয়ে বহু কথাবার্তা বলা হল। এর মধ্যে আমার মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল : বৈধতাপূর্ণ বিরোধীপক্ষ গঠনের অধিকার। যার অর্থ হল : একটি একক বৃহৎ পার্টিতে ভারতবর্ষের নানান গোষ্ঠী ও পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার পদ্ধতি হিসাবে এক ধরনের ব্লক গঠন করা। হরেকরকম বাম গোষ্ঠী ও বাম পার্টিগুলিকে একটি একক কমিউনিস্ট পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ করার শুধুমাত্র একটি পথ হিসাবে যদি কেউ তার নিজস্ব সূত্রায়নকে আঁকড়ে ধরেন তবে তা ভালোই হবে। যাই হোক, এ প্রশ্নে আমাদের একটা মতপার্থক্য থাকছে। বাম গোষ্ঠী ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমাদের অন্যরকম ধারণা আছে। তা হল বাম কনফেডারেশন। আমরা ইতিমধ্যে তা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছি। বিভিন্ন পার্টিগুলির মধ্যে বর্তমান মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা ব্যাপক ঐক্যের জন্য বাম কনফেডারেশনের এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারি। কিন্তু একক কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেই যদি আমরা সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে চাই তবে এখনও পর্যন্ত অভিজ্ঞতা হল তা নেতিবাচক হিসাবেই প্রমাণিত হয়েছে। এর ভিত্তিতেই পিসিসি কাজ করার চেষ্ঠা করে। কমিউনিস্ট আন্দোলন ও এমএল আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করতে ব্লক ভিত্তিক কার্যকলাপ ও বৈধ বিরোধীপক্ষের সমস্ত কর্মরতই শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলায় পর্যবসিত হয়েছে। পরিণামে তারা যত না ঐক্যবদ্ধ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে। এর বিপরীতে, আপনারা যদি আমাদের পার্টির ইতিহাস ও অভিজ্ঞতাগুলির প্রতি নজর দেন তাহলে দেখবেন যে আমরা কখনই ঐক্যের জন্য ঐ প্রেক্ষিতে অগ্রসর হইনি। তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন গ্রুপ ও পার্টি থেকে কমরেডরা অনবরত আমাদের পার্টিতে এসে যোগ দিচ্ছেন। আপনারা যদি আমাদের পার্টি সদস্যপদের বিষয়টি খতিয়ে দেখেন তবে দেখবেন যে এক ভালো সংখ্যক কর্মীরাই এসেছেন অন্যান্য পার্টি থেকে এবং আমার মনে হয় যে বোধহয় এই সদস্যরা, ১৯৭৪ সাল থেকে যত সদস্য আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরকে সংখ্যাগতভাবে ছাপিয়ে যাবেন। আর, পিসিসি, সিপিআই, সিপিআই(এম)-এর মতো বিভিন্ন গ্রুপ ও পার্টি তথা অন্যান্য পার্টি থেকে আসা সেই সমস্ত বিরাট সংখ্যক কমরেডরা গণতান্ত্রিকভাবে কেন্দ্রীভূত পার্টির অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ এই আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি মনে করি না যে এজন্য পার্টির কার্যকলাপে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আর আমরা যে কাঠামোতে নেতৃত্ব দিচ্ছি তাতে নানান ধারা থেকে আসা কমরেডদের ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছি। কয়েকটি গোষ্ঠী এমনকি তাদের সংগঠনকে ভেঙ্গে দিয়ে আমাদের পার্টির সঙ্গেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এভাবেই আমরা বাম ও নকশালপন্থী বিপ্লবীদের এক ভালো সংখ্যক কর্মীদের আমাদের পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি। এটিই আমাদের ইতিহাস হিসাবে থেকেছে। ভারতবর্ষে অন্য যে কোনো গ্রুপের নেওয়া ঐক্য প্রচেষ্টার তুলনায় আমাদের এই প্রচেষ্টা অনেক বেশি মজবুত ঐক্যের জন্ম দিয়েছে। এখন আমরা যদি বৈধ বিরোধী পক্ষের ভিত্তিতে ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার দিকে যাই আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু তাকে ভুল হিসাবেই প্রমাণিত করেছে। আমি মনে করি, বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আমাদের বাম কনফেডারেশনের মতো অনেক ভালো বিকল্প ধারণা রয়েছে। তা সত্ত্বেও, এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কটি চালানো যেতেই পারে।
গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার প্রশ্নে আমি আরেকটি ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাই। আমরা দলিলে এটাই বলেছি যে, গণসংগঠনগুলির কার্যকলাপে পার্টি নেতা ও পার্টি কমিটিগুলি যেন অযথা হস্তক্ষেপ না করে। এর অর্থ হল, গণসংগঠনগুলি যেন নিজের নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু কিছু কমরেড এর সাধারণীকরণ করে বলছেন যে ঐসব ক্ষেত্রে যদি তা প্রযোজ্য হয়ে থাকে, তবে একইভাবে নীচুতলার পার্টি কমিটিগুলির কার্যকলাপে উচ্চতর পার্টি কমিটিগুলিও যেন নাক না গলায়। আমার মনে হয় যে দুটি বিষয়কে সমান করে দেখা ঠিক হবে না। পার্টি ও গণসংগঠনগুলির মধ্যেকার সম্পর্কের বিষয়টি অনেক ভিন্ন। পার্টি ও গণসংগঠন হল দুটি আলাদা সত্তা। আমরা গণসংগঠনগুলিতে কাজ করতেই পারি, কিন্তু তাদের সত্তা আলাদা। তাদের রয়েছে নিজস্ব স্বকীয় চরিত্র। আমরা ইতিমধ্যেই একটি সংশোধনী নিয়ে এসেছি যে, গণসংগঠনগুলিকে তাদের সম্মেলনগুলিতে নিজেদের নেতৃত্বকে নির্বাচিত করা উচিত। আর এভাবেই গণসংগঠনগুলি বিকশিত হবে স্বাধীনভাবে। তাই একই পার্টির মধ্যে দুটি পার্টি কমিটি অর্থাৎ উচ্চতর কমিটির সঙ্গে নিম্নতর কমিটির মধ্যকার সম্পর্ক আর গণসংগঠন ও পার্টির ভেতরের সম্পর্ক গুণগতভাবেই অনেক আলাদা। এই দুটি বিষয়কে অবশ্যই গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না, সমানভাবে দেখা ঠিক হবে না।
পার্টি কেন্দ্র সম্পর্কে বলতে গেলে, আমি অবশ্যই বলব, সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের মেনেই চলেন। সেটি অন্যতম মূল নীতি যা আমরা অনুসরণ করি। পার্টি কমিটির মধ্যে সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকেই মেনে চলেন, এটিই স্বাভাবিক। আবার নীচুতলার পার্টি কমিটিগুলি উচ্চতর পার্টি কমিটিগুলির অধীন। এটিও খুবই স্বাভাবিক। খুবই বোধগম্য। ব্যক্তি সংগঠনের অধীন। এটিও ভালোভাবেই বোঝা যায়। কিন্তু গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার মৌলিক বিষয় হল সমগ্র পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন। এই বাড়তি সূত্রায়ন কিছু কমরেড প্রায়শই ভুলে যান। এটিই বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সূত্রায়ন বলে দেয় যে সমগ্র পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন। আর এইভাবে সমগ্র সম্পর্কই উল্টে যায়। সমগ্র পার্টির অর্থ হল বিশাল এক সংখ্যাধিক্য। আর কেন্দ্রীয় কমিটি হচ্ছে ২৫ সদস্যের সংখ্যালঘু। এটি খুবই অস্বাভাবিক ও ভিন্ন ব্যাপার। আর এটিই কমিউনিস্ট পাটির গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার মূল কথা। এই বিষয়টি না বুঝতে পারলে বোধ হয় আপনারা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার অখণ্ডতাকে উপলব্ধি করতে পারবেন না। তাই কেন্দ্রীয় কমিটি শুধু নীচুতলার কমিটিগুলির ক্ষেত্রে নয়, বরং প্রয়োজনে যে কোনো সদস্য, যে কোনো কমিটি, যে কোনো ক্যাডারের ক্ষেত্রে যে কোনো সময়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। এটি কমিউনিস্ট পার্টিতে পুরোমাত্রায় অনুমোদনযোগ্য। এই হল আসলে এক কমিউনিস্ট পার্টি। এই কেন্দ্রীকতা ছাড়া, এই ঐক্য বাদে কোনো লৌহদৃঢ় শৃঙ্খলা থাকে না, গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণী লড়াইয়ে শত্রুর বিরুদ্ধেও আমরা সংগ্রাম করতে পারব না। ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ অংশের এইভাবে ‘সংখ্যালঘু’দের অধীনে থাকাই বোধহয় কমিউনিস্ট পার্টির গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি সম্পর্কে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা ক্ষোভ সৃষ্টি করা খুবই ক্ষতিকর। বিভিন্ন ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ করার অধিকার সম্পর্কেই প্রশ্ন তোলা, এটা করতে পারবে না – ওটা করতে পারবে না ইত্যাদি বলা কমিউনিস্ট পার্টিতে কখনই চলতে পারে না। এটি খুবই এক অদ্ভূত ধরনের ব্যাপার। কেউ তা পছন্দ করতে পারেন, কেউ না-ই পারেন। কিন্তু একবার যখন আমরা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন আমাদের মেনে নিতেই হবে যে কেন্দ্রীয় কমিটি কিন্তু অন্যান্য উচ্চতর কমিটির মতোই হবহু এক নয়। তার সমগ্র কর্মীবাহিনীর উপর রাজ্য কমিটির তাই অধিক কর্তৃত্ব থাকে না। অন্যান্য এলাকা কমিটিরও নয়। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষেত্রেই এই বিশেষ অধিকার বলবৎ রাখা হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির সংবিধানে এ হল এক বিশেষ দিক। আর আমার মনে হয়, এই ধারণাকে গুলিয়ে দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টাই পার্টির পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে।