পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস ২২ এপ্রিল (১৯৮৮) উপলক্ষ্যে
এ বছর ২২ এপ্রিল আমাদের পার্টি ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পদার্পণ করছে। দিনটি পালন করার জন্য গোটা পার্টি জুড়ে বৈঠক সংগঠিত করতে হবে, যাতে প্রতিটি পার্টি সভ্য উপস্থিত থাকবেন। এই মহান দিনে প্রত্যেক পার্টি সভ্যকে বিলোপবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ও পার্টির স্বাধীন পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার শপথ নিতে হবে নতুন করে।
বিলোপবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম খুবই জটিল একটি বিষয়। কারণ পার্টির অগ্রগতির বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে বিলোপবাদ বিভিন্ন রূপ ধরে দেখা দেয়। বিলোপবাদ কী? লেনিনের ভাষায় তা হল, “পার্টির বর্তমান সংগঠনকে বিলোপ করে দিয়ে (অর্থাৎ ভেঙ্গে দিয়ে, ধ্বংস করে দিয়ে, উঠিয়ে দিয়ে, বন্ধ করে দিয়ে) সে জায়গায় আইনিভাবে (অর্থাৎ আইন মেনে, ‘খোলাভাবে’) কাজ চালানোর এক ঢিলেঢালা সংগঠন নিয়ে আসার জন্য পার্টি-বুদ্ধিজীবীদের কোনো গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা। যে কোনো মূল্যে, এমনকি পার্টির কর্মসূচি, কৌশল ও ঐতিহ্যগুলিকে (পার্টির অতীত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে) পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েও এটা করার জন্য এঁরা চেষ্টা করে থাকেন।”
অতএব বিলোপবাদের আসল বৈশিষ্ট্য কেবল প্রকাশ্য পার্টির সপক্ষে এবং আইনি সুযোগগুলি পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানোর সপক্ষে যুক্তি হাজির করাই নয়, বরং “পার্টির জায়গায় এমন কিছু নিয়ে আসা, যার কোনো আকারই নেই, যাকে ঠিক পার্টিই বলা যায় না।” চিন্তার এই বিলোপবাদী ধারাটিকে আগে পরাস্ত না করে চতুর্থ কংগ্রেসের তুলে ধরা পার্টি পুনর্বিন্যাসের কাজটিকে ঠিকমতো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিলোপবাদের আর একটি দিক হল এই যে তা বিপ্লবী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের দুর্গ বিপ্লবী কৃষক সংগ্রামের পরিধিকে সাহসের সঙ্গে সম্প্রসারিত করার তাৎপর্যকে ছোটো করে দেখায়। এর পরিবর্তে সে এমন একপ্রস্থ কর্মনীতির ওকালতি করে যা কৃষক সংগ্রামকে সংস্কারবাদের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলার দিকেই নিয়ে যেতে বাধ্য।
কৃষক সংগ্রামের ব্যাপকতা ও গভীরতাকে বাড়িয়ে তোলার যে লাইন চতুর্থ কংগ্রেস গ্রহণ করেছে, চিন্তার এই ধারাটিকে পরাস্ত না করে তা কিছুতেই প্রয়োগে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
‘সমাজগণতন্ত্রীদের পরিচালনাধীন’ বামফ্রন্টগুলির শরিক হওয়া এবং সে জন্য ‘বামফ্রন্ট’ সরকারগুলি সম্পর্কে পার্টির কর্মনীতি পরিত্যাগ করার ওকালতির মধ্যে দিয়েই এই বিলোপবাদী চিন্তাধারা সব চাইতে জোরালোভাবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথমে সমাজগণতন্ত্রীদের কর্মসূচির ভিত্তিতে ব্যাপক বাম ঐক্য গড়ে তোলা এবং তারপর ভেতর থেকে মেরুকরণের কাজ চালানোর এই বিমূর্ত রাজনৈতিক কৌশলের আসল অর্থ হল, বিপ্লবী কমিউনিস্টদের স্বাধীন পতাকা পরিত্যাগ করা; সমাজতন্ত্রকে উদ্ঘাটিত করা, বিচ্ছিন্ন করা ও পরাস্ত করার যে ঐতিহাসিক ব্রত তাঁদের সামনে রয়েছে তা পরিত্যাগ করা।
বামপন্থী শক্তিগুলির মধ্যে মেরুকরণ ঘটানোর এবং এক নতুন বনিয়াদের ওপর ব্যাপক বাম ঐক্য গড়ে তোলার যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কৌশল পার্টির চতুর্থ কংগ্রেস গ্রহণ করেছে, উপরোক্ত রাজনৈতিক সুবিধাবাদকে পরাস্ত না করে তা বলিষ্ঠভাবে প্রয়োগে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিহারের বুকে আমাদের পার্টি দৃঢ়তার সাথে স্বাধীন পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে, বিপ্লবী কৃষক সংগ্রামের সামনের সারিতে অবিচল থেকেছে এবং জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগ্রামগুলিতে (যেমন, সাম্প্রতিক ‘ভারত বনধে’) সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপক বাম শক্তিগুলির সঙ্গে যুক্ত কার্যকলাপ গড়ে তুলতেও সফল হয়েছে। বিহারের বুকে আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে গোটা পার্টিকেই শিক্ষা নিতে হবে এবং পার্টির চতুর্থ কংগ্রেসের পথ ধরে এগিয়ে চলার জন্য দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।