• নোট বাতিলের কথা ঘোষণার সাথে সাথেই সুদখোর, মহাজন এবং দালালরা পুরনো ৫০০ টাকার বিনিময়ে ৪০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিতে থাকে। টিকে থাকার লক্ষ্যে কিছু নগদ টাকার প্রয়োজনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা দরিদ্রদের এইভাবে তাদের কষ্টার্জিত নগদ অর্থ থেকে প্রতারিত করা হয়েছিল।
  • বিমুদ্রাকরণের পর আয়কর দপ্তর তল্লাশি চালিয়ে ২৩০ কোটি টাকার নতুন নোট বাজেয়াপ্ত করেছে! এই পরিমাণ হল ৯৬৪১০টি চেকের মাধ্যমে সপ্তাহে ২৪০০০ টাকা করে তোলা এবং এটিএম থেকে প্রতিদিন ৯২৫৫৩২টি ক্ষেত্রে টাকা তোলার সমান। আরও কত কোটি যে আবিষ্কৃত বা উদ্ধার হতে বাকি রইল তা শুধু আমাদের কল্পনারই বিষয় হতে পারে।
  • পশ্চিমবাংলায় এপ্রিল-মে মাসে যে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেল তাতে রাণিগঞ্জ থেকে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন মণীশ শর্মা। এক কয়লা মাফিয়া সহ আরও ছ-জনের সঙ্গে তিনি কলকাতায় গ্রেপ্তার হলেন। তাদের কাছ থেকে গুচ্ছ-গুচ্ছ টাকার বাণ্ডিল পাওয়া গেল যার পরিমাণ ৩৩ লক্ষ টাকা, তার বেশিরভাগটাই আবার নতুন ২০০০ টাকার নোটে। শর্মা কয়েক মাস আগে বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও তিনি বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র ঘনিষ্ঠ।
  • তামিলনাড়ুর সালেমে বিজেপির যুব নেতা জে ভি আর অরুণ বললেন, “আসুন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা লাইনে দাঁড়াই।" এর পরপরই নগদ ২০.৫ লক্ষ টাকা সহ তাকে গ্রেপ্তার করা হল, যার মধ্যে ৯২৬টি নতুন ২০০০ টাকার নোটও ছিল!
  • গুজরাটে নোট বন্দী ঘোষণার কয়েকদিন পর, ১৬ নভেম্বর নতুন ২০০০ টাকার নোটে ২.৯ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল!

নোট বন্দী যে সমস্ত নতুন রূপের দুর্নীতির জন্ম দিয়েছে, এগুলো তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত মাত্র। লাইনে দাঁড়ানো জনগণ নগদ টাকা পাননি, কিন্তু দুর্নীতিপরায়নদের তা পেতে অসুবিধা হয়নি। সরকার এখন বলছে -- এই দুর্নীতির জন্য ব্যাঙ্কগুলোকে দায়ী করুন।

একথা অস্বীকারের নয় যে, ব্যাঙ্ক ও আরবিআই-এর কিছু কর্তাব্যক্তি এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে রয়েছে -- আর ব্যাঙ্কগুলোর অধিকাংশ সাধারণ কর্মী দিনরাত কাজ করে নোট বন্দী সংকটের মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন এবং জনগণের রোষের মুখে পড়েছেন।

আসল প্রশ্নটা অতএব হল, নোট বন্দী সত্ত্বেও দুর্নীতি যদি অব্যাহত থাকে ও তার বাড়বাড়ন্ত ঘটে, তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে এত যন্ত্রণা চাপানোর কোনো দরকার আদৌ ছিল কি?

 

নরেন্দ্র মোদী কিভাবে নোট বন্দী আখ্যানকে পাল্টালেন

(প্রভীন চক্রবর্তীর প্রতিবেদনের অংশবিশেষ, ফার্স্ট পোস্ট, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬)

প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ১৩ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নোট বন্দী নীতি সম্পর্কে সারা দেশে ছটি বক্তৃতা দেন, যার মধ্যে জাতির প্রতি তার রেডিও বার্তা মন কি বাত-ও রয়েছে। ঐ সমস্ত বক্তৃতার বিষয়বস্তুও ঐ ওয়েবসাইটে রয়েছে।

বক্তৃতাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, (অনুবাদ করে নেওয়ার পর) নোট বন্দী পদক্ষেপ ও তার লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে আখ্যানের অভিমুখ প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করেছেন।

তার ২০১৬-র ৮ নভেম্বরের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী যখন নোট বন্দী নীতির ঘোষণা করলেন, সেই বক্তৃতায় তিনি "জাল মুদ্রা”-র চেয়ে "কালো টাকা" এই শব্দবন্ধ চার গুণ বেশি ব্যবহার করেন।

তার ২৭ নভেম্বরের বক্তৃতায় তিনি "ডিজিটাল/নগদহীন" কথাটা "কালো টাকার" তিনগুণ বেশি ব্যবহার করেন, অার তাতে "জাল নোট"-এর কোনো উল্লেখই ছিল না। স্মরণ করুন, তার প্রথম ৮ নভেম্বরের ভাষণে "ডিজিটাল/নগদহীন"-এর কোনো উল্লেখই ছিল না।