গোড়ার দিকে তার ভাষণগুলোতে প্রধানমন্ত্রী 'কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' নিয়ে মুখর হতেন। তারপর তিনি 'জাল নোট' আর 'সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ যোগানো'র কথাই বেশি করে বলতে লাগলেন। তারপর তার ভাষণগুলো কালো টাকার উল্লেখকে এড়িয়ে চলল এবং সেগুলোতে নোট বাতিলের মূল লক্ষ্য হিসাবে 'নগদহীন অর্থনীতির' দাবিকে তুলে ধরা হতে লাগল।
২০১৪-র নির্বাচনে মোদীর 'জুমলা' ছিল 'বিদেশী ব্যাঙ্কগুলো থেকে কালো টাকাকে ফিরিয়ে আনা হবে'। ৮ নভেম্বরের নোট বন্দী পদক্ষেপের পর জুমলাটা হল 'কালো টাকার বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'। এখন মনে হচ্ছে যে মোদী কালো টাকার কথা ভুলে গেছেন এবং 'নগদহীন অর্থনীতি' নতুন জুমলা রূপে সামনে এসেছে। এর পরের জুমলাটি কি?
বিমুদ্রাকরণ সৃষ্ট কর্মহীনতার প্রতিক্রিয়ার মোকাবিলা শহরাঞ্চলের দিনমজুররা কিভাবে করছেন একনজরে তা বোঝার জন্য শান্তিনগরে আসুন। এই শান্তিনগর হল নয়া দিল্লী থেকে ২০০ কিমি দূরে উত্তরপ্রদেশের শিল্প শহর ফিরোজাবাদে শ্রমিকদের এক বসতি কেন্দ্র। ফিরোজাবাদ তার কাঁচ শিল্প, বিশেষভাবে কাঁচের চুড়ির জন্য বিখ্যাত।
চুড়ি তৈরির এক শ্রমিক এবং আট সন্তানের মা রাইসা বেগম বললেন, “খারাপ সময় ধাক্কা দেওয়ার কয়েকদিন পর পর্যন্ত আমরা আমাদের সঞ্চয় দিয়ে কোনো রকমে চালালাম। নভেম্বর যখন শেষ হয়ে এল, তখন আমরা সঞ্চয়ের প্রায় সবটাই খরচ করে ফেলেছি। তারপর আমরা ৫০০ টাকায় ভাত্থি (চুড়ির মুখ জোড়ার জন্য পরিবারের গ্যাস চুল্লি) বিক্রি করে দিলাম। এখন আমরা দিনে মাত্র একবার পেটভরা খাবার খেতে শুরু করেছি।" ঐ ভাত্থি ছাড়াও রাইসা বেগম ঘরের বেশিরভাগ বাসনপত্রই বিক্রি করে ফেলেছেন এবং এই প্রতিবেদক ৫ ডিসেম্বর শেষ যখন তার সঙ্গে দেখা করেন তখন তিনি পরিবারের একমাত্র সাইকেলটি বিক্রির জন্য খরিদ্দারের সন্ধান করছিলেন।
যে গতিতে বিমুদ্রাকরণ করা নোটসমূহ ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার মধ্যে ফিরে আসছে তাতে একটা প্রশ্ন সামনে আসছে : বিমুদ্রাকরণের উদ্যোগ কি আদৌ কালো টাকার বিরুদ্ধে একটা "সার্জিক্যাল স্ট্রাইক" হয়ে দেখা দেবে? সরকারী সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্যবসা সংক্রান্ত খবরের চ্যানেল সিএনবিসি টিভি-১৮ তাদের একটা রিপোর্টে বলেছে যে, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪.১৮ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ১১ লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে। বাতিল হওয়া নোট ব্যাঙ্কে জমা করার জন্য ভারতবাসীদের কাছে এখনও ৩০ দিন সময় রয়েছে।
এর আগে বিশ্লেষকদের আনুমানিক হিসেব ছিল যে, বাতিল হওয়া নোটের ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ কোটি কখনই জমা পড়বে না যেটা অারবিঅাই-এর এবং অবশেষে সরকারের একটা পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা লাভ হবে। সিএনবিসি টিভি-১৮-র রিপোর্ট এখনও পর্যন্ত যে ইঙ্গিত দিয়েছে সেই ধারা যদি চলতে থাকে তবে ঐ হিসেব ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে।