– অরিন্দম সেন
মাত্র গোটা দুই দশকের মধ্যে কত দ্রুতই না মানুষের রাজনৈতিক মনোভাব এবং মতাদর্শগত আলোচনাধারা পাল্টে যায়! নিউ ইয়র্কার পত্রিকা ১৯৮৯ সালে জানুয়ারী মাসের একটি সংখ্যায় “পুঁজিবাদের বিজয়” শীর্ষক একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে যাতে পূর্ব ইউরোপ ও সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মেকি-কমিউনিস্টদের পতন ও সংকট নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করা হয়। পত্র-পত্রিকা ও বৈদ্যুতিন প্রচারমাধ্যমে বিষয়বস্তুটি প্রভূত জায়গা করে নেয়, এছাড়া ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ও শেষ মানব ব্যাপক চর্চিত এই গ্রন্থে ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা মূলত এটাই বলেছেন যে, সমস্ত জাতির ক্ষেত্রেই উদারবাদী গণতন্ত্রই হল চূড়ান্ত রূপের সরকার যেখান থেকে অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় উত্তরণ অার সম্ভব নয়। পেরি অ্যান্ডারসনের মতো মার্কসবাদীরা ফুকুয়ামার তীব্র সমালোচনা করেছেন। জাক দেরিদা মার্কসের প্রেতচ্ছায়া (১৯৯৩) নামক গ্রন্থে বলেছেন, ফুকুয়ামা এবং তাঁর বইয়ের দ্রুত প্রসিদ্ধিলাভ “মার্কসের মৃত্যু”কে সুনিশ্চিত করার ব্যাগ্রতারই এক লক্ষণ। ঊদারবাদী অাধিপত্যের যে মহিমাকীর্তন ফুকুয়ামা করেছেন দেরিদা তাকে অত্যন্ত জোরালোভাবে খণ্ডন করেছেন : “… কেউ যখন উদারবাদী গণতন্ত্রের অাদর্শের নামে নতুন করে এই বাণী প্রচার করেন যে, তা মানব ইতিহাসের চূড়ান্ত অাদর্শরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তখন অামাদের উচ্চস্বরে এই কথা বলতে হবে যে : হিংসা, অসমতা, গরিষ্ঠাংশ মানুষকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে দেওয়া, দুর্ভিক্ষ এবং এইভাবে অর্থনৈতিক উৎপীড়ন পৃথিবী ও মানবজাতির ইতিহাসে এর অাগে কখনই এত বেশি সংখ্যক মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।”-এর মতো (১৯৯২) আরও গুরুগম্ভীর রচনা প্রকাশ হতে থাকে। চারিদিকে শোনা যেতে থাকে একটি শ্লোগান : “টিনা” (TINA – There is No Alternative), অর্থাৎ পুঁজিবাদের কোনো বিকল্প নেই।