“মানবজাতি সেই সমস্ত কাজকেই হাতে নেয় যেগুলো সে সমাধান করতে পারে, কারণ, বিষয়টাকে আরও খুঁটিয়ে দেখলে সবসময়েই দেখা যাবে যে ঐ কাজ তখনই সামনে আসে যখন তার সমাধানের জন্য বস্তুগত শর্তগুলো ইতিমধ্যেই বিদ্যমান বা অন্তত সেগুলো গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।” (রাজনৈতিক অর্থনীতির সমালোচনায় একটি সংযোজনার মুখবন্ধ, মার্কস)
ঊনবিংশ শতকের মোড়ে মানবজাতি পরিপূর্ণ সাহসিকতা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে শোষণ ও নিপীড়নমু্ক্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজের সূচনা ঘটানোর মহান কাজে হাত দিয়েছিল। ততদিনে সমগ্র মানবজাতির মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগত প্রাচুর্য পুঁজিবাদের গর্ভে দ্রুত বিকাশলাভ করছিল; এই মহান রূপান্তরণে পথনির্দেশের জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্বের ভিত্তি বা উপাদানগুলো বিশিষ্ট দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ এবং সমাজ বিজ্ঞানীদের রচনায় রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করেছিল; এবং ঐতিহাসিক মাধ্যমটি – এই বিপ্লবী পরিবর্তনকে প্রকৃতভাবে রূপায়িত করতে সক্ষম সামাজিক শক্তিটি, অর্থাৎ পুঁজিবাদের সম্ভাব্য “কবর খননকারীরা” – তাদের আরাধ্য কাজকে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যেই ইতিহাসের মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিল, যদিও তারা মতাদর্শগতভাবে এজন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু এই শর্তগুলোর উপস্থিত হওয়ার অর্থ এই ছিল না যে, পুঁজিবাদ নিজে থেকেই ভেঙ্গে পড়বে। তার জন্য আরও যা করার দরকার ছিল তা হল, এইসব স্বতন্ত্র উপাদানগুলোকে সংযুক্ত ও সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে (ক) সেই সামাজিক শক্তি অর্থাৎ আধুনিক সর্বহারাকে এক সর্বাঙ্গীণ, দৃঢ় বিপ্লবী বিশ্ববীক্ষায় সজ্জিত করা, (খ) আশু পরিপ্রেক্ষিতে প্রযোজ্য কর্মসূচী সহ এক সঠিক ও ব্যাপকতর অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য ভবিষ্যৎ রণনৈতিক নকশাকে সূত্রবদ্ধ করা, এবং (গ) সম্প্রসারমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মতাদর্শগতভাবে সংহত এক কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলা। ইস্তাহার প্রথম দুটি কাজকে দারুণভাবে সম্পন্ন করে এবং তৃতীয়টিকে পূরণ করার দিকে এগিয়ে যায়, এবং এইভাবে পৃথিবীর হতভাগ্যদের জন্য দুনিয়াকে জয় করার লক্ষ্যে সর্বহারার সচেতন সম্মুখ যাত্রার সূচনা ঘটায়।
তারপর থেকে ঐ সম্মুখ যাত্রা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে জোয়ার ও ভাঁটার মধ্যে দিয়ে অব্যাহত রয়েছে।
আজ বিশ্বায়ন ও অন্তর্জাল-এর যুগে “ইউরোপ কমিউনিজমের ভূত দেখছে” না ঠিকই, কিন্তু অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং আর্থ-সাংস্কৃতিক এই ত্রিমুখী ভয়াবহ সংকটে গোটা বিশ্বব্যবস্থা স্পষ্টতই কেঁপে উঠেছে, যার পরিণতিতে বড় বড় সামাজিক আলোড়ন ও অভ্যুত্থানগুলো ঘটছে। আসুন, সাম্রাজ্যবাদ ও তার পদলেহী কুকুরদের কব্জা থেকে বিশ্বকে ছিনিয়ে নিতে, ইস্তাহার-এর মর্ম অনুসরণে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে জয়ী হতে এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যোগ দিই। ইস্তাহার আজও বিগত দুই শতাব্দীর মতোই সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। মানবজাতি ঊনবিংশ শতকে যে কাজে হাত দিয়েছিল, একুশ শতকে তাকে সম্পন্ন করা যায় এবং তা অবশ্যই করতে হবে।