সামাজিক উৎপাদন ও বণ্টনের সুবিস্তীর্ণ নেটওয়ার্কের ঠিক কোথায় একটি সামাজিক গ্রুপ বা গোষ্ঠীর অবস্থান, উৎপাদন উপকরণগুলোর সাথে তাদের সম্পর্কটা ঠিক কেমন (সেগুলোর মালিকানা তার হাতে আছে, নাকি সেগুলো তারা শুধু কাজে লাগায়) এবং ফলত মোট সামাজিক সম্পদের কতটা তাদের হাতে আছে – এইসব দ্বারা শ্রেণী নির্ধারিত হয়। একটি সহজ উদাহরণ নেওয়া যাক। শিল্পপতিরা একটি দেশের অর্থনৈতিক (এবং সেই সূত্রে রাজনৈতিক) ব্যবস্থায় এক সুবিধাভোগী অবস্থানে থাকে। কারণ তারা কারখানার মালিক হওয়ায় শ্রমিকদের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত মূল্য গ্রাস করে বিপুল সম্পত্তি অর্জন করে। বিপরীতপক্ষে শ্রমিকরা অত্যন্ত অসুবিধার মধ্যে দিন কাটান। কারণ তাঁরা মেশিনপত্র চালান বটে, কিন্তু সেগুলোর মালিকানা তাঁদের হাতে থাকে না। ফলে কাজ পেলে তবেই তাঁদের খাওয়া জোটে, না পেলে উপোস।
মূলত পৃথক পৃথক উৎপাদনের ধরন অনুসারে বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন যুগে সমাজের শ্রেণীবিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়। কিন্তু প্রতিটি শ্রেণীসমাজই শ্রমজীবী শোষিত শ্রেণীসমূহ আর শোষক তথা শাসক শ্রেণীসমূহ – এ দুয়ের মধ্যে বিভাজিত থাকে। এই দুই অংশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চলে বিভিন্ন তীব্রতায় ও বিভিন্ন রূপে – যেমন মজুরি ও জমির জন্য সংগ্রাম, রাজনৈতিক গণতন্ত্র ও সরকারী কর্মনীতি পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন, দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী জমানাকে উচ্ছেদ করার লড়াই ইত্যাদি। সংকটময় সন্ধিক্ষণে এইসব সংগ্রাম তীব্রতর হয়ে বিপ্লবের রূপ ধারণ করে, যা সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চরিত্রকে আমূল পাল্টে দেয়।
ট্রেড ইউনিয়ন, বণিক সভা প্রভৃতি গণসংগঠনের মাধ্যমে এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেও শ্রেণীগুলো তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের দেশে কংগ্রেস, বিজেপি প্রভৃতি দল পুঁজিপতি, জমিদার ও কুলাকদের প্রতিনিধিত্ব করে ও তাদের হয়ে কাজ করে।