(লিবারেশন, আগস্ট ১৯৯৫ থেকে, সংশোধিত)
প্রায় তিন মাস পর বিহার নির্বাচন সম্পর্কে কিছু লিখতে যাওয়া অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু দেরীতে পর্যালোচনার বাড়তি সুবিধা এই যে, অন্যান্য বিশ্লেষকদের যুক্তি ও সিদ্ধান্তগুলিকে খুঁটিয়ে দেখা যায়। তাছাড়া কর্মীবাহিনীর বিভ্রান্তিকে কাজে লাগিয়ে যে বিকল্প অবস্থান পার্টির অভ্যন্তরে জন্ম নিয়েছে, তা দানা বাঁধতে শুরু করেছে অতি সম্প্রতি। এ সমস্ত কিছুই আমাদের নির্বাচনী অনুশীলন ও ফলাফল আরেকবার খতিয়ে দেখা একান্ত প্রয়োজনীয় করে তুলেছে।
আমাদের অবস্থান সম্পর্কে কয়েকজন বিশ্লেষকের পর্যালোচনা দিয়ে শুরু করা যাক। সিপিআই তাত্ত্বিক চতুরানন মিশ্র এক হিন্দী দৈনিকে মন্তব্য করেছেন যে, যেখানে সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এর সিংহভাগ ভোট এসেছে জনতা দলের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাতের মাধ্যমে, সেখানে সমতা পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা থেকে সিপিআই(এমএল) যৎসামান্য ভোটই পেয়েছে। সিপিআই(এম)-এর সমান সংখ্যক আসন সিপিআই(এমএল) লাভ করায় তিনি বিস্মিত হয়েছেন। এ কে রায় তাঁর বহুল আলোচিত প্রবন্ধে জনতা দলের ওপর বামেদের ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জনতা দলের সঙ্গে আঁতাতে যেতে অস্বীকার করায় সিপিআই(এমএল)-কে ‘একরোখা’ আখ্যা দিয়েছেন এবং সমতা পার্টি ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সঙ্গে অনীতিনিষ্ঠ আঁতাতে আবদ্ধ হওয়ার অভিযোগে সিপিআই(এমএল)-কে অভিযুক্ত করেছেন। কেননা, তাঁর মতে, ঐ আঁতাতের পেছনে শুধুমাত্র আসন ও ক্ষমতার প্রলোভনই কাজ করেছে।
এককালে পার্টি ইউনিটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন নকশালপন্থী সাংবাদিক শ্রী তিলক ডি গুপ্ত ইকনমিক এন্ড পলিটিক্যাল উইকলি পত্রিকায় লিখেছেন, “নিজেদের নির্বাচনী ফলাফলে সন্তোষলাভের যথেষ্ট কারণ সিপিআই(এমএল) গোষ্ঠীর রয়েছে, যদিও তাদের মাত্রাধিক প্রত্যাশার তুলনায় তাদের ফলাফল যথেষ্টই খারাপ হয়েছে। সমস্ত দলগুলির মধ্যে সিপিআই(এমএল)-কেই প্রশাসনের সর্বাধিক শত্রুতার মুখোমুখি হতে হয়, যে প্রশাসন বৃহৎ জমিদারদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে যুক্ত। এছাড়াও ঐ দলকে এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, যেখানে যে সমস্ত গ্রামীণ মেহনতি মানুষকে ঐ দল কৃষিসংগ্রামে সামিল করেছিল, তাঁদের এক বড় অংশ নির্বাচনে জনতা দলকে ভোট দেয়। তাছাড়া সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এর তুলনায় সিপিআই(এমএল)-কে তার নিজস্ব শক্তির ওপর নির্ভর করেই লড়তে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিত থেকে বিচার করলে বলা যেতে পারে যে, এক যথেষ্ট কঠিন পরিস্থিতিতেও ঐ দল যথেষ্ট ভালো ফল করেছে।”
এই প্রশংসার পর শ্রীযুক্ত গুপ্ত যোগ করেছেন, “একথা বলার পর এটাও উল্লেখের প্রয়োজন যে, অ-যাদব ভূমি স্বার্থের প্রতিনিধিদের আপাত সমাজতান্ত্রিক, কিন্তু স্পষ্টতই দক্ষিণপন্থী সংগঠনের সঙ্গে অনীতিনিষ্ঠ জোট গঠনের প্রয়াস এক ধরনের রাজনৈতিক সুবিধাবাদকেই চিহ্নিত করে, যা অতীতে ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে বারংবার পরিলক্ষিত হয়েছে। অধিকন্তু, জনতা দলকে কালিমালিপ্ত ও ক্ষমতাচ্যুত করার আগ্রহাতিশয্যে অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সিপিআই(এমএল) গোষ্ঠীও বিহারে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের স্বেচ্ছাচারী ও পক্ষপাতদুষ্ট কার্যকলাপের এক সক্রিয় সহযোগী না হলেও অন্তত কিছুটা সমর্থন যুগিয়েছে।”
দুই জোট : দুই কৌশল
এখন দেখা যাক এই সমস্ত বক্তব্য কী তাৎপর্য বহন করে। চতুরানন মিশ্রের বিশ্লেষণে জনতা দলের সঙ্গে সিপিআই-সিপিআই(এম)-এর জোট এবং সমতা পার্টির সঙ্গে সিপিআই(এমএল)-এর জোটকে একই গোত্রের হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, তার মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র পরিমাণগত। অর্থাৎ নিজ নিজ জোট থেকে কে কতটা ভোট আদায় করতে পেরেছে, তফাৎ শুধু সেখানেই। জোটগুলির মধ্যকার অন্তর্নিহিত গুণগত পার্থক্যটিকে তিনি এড়িয়ে গেছেন। প্রথম জোটটি গড়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে, দ্বিতীয়টি এক বিরোধী দলের সঙ্গে। তাছাড়া চূড়ান্ত নির্ভরশীলতাই যেখানে প্রথম জোটটির বৈশিষ্ট্য, সেখানে দ্বিতীয় জোটটির ভিত্তি হল চরম স্বাধীনতা। নিজস্ব শক্তির ওপর ভিত্তি করে সিপিআই(এমএল)-এর বিজয়ের বিপরীতে সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এর প্রাপ্ত সিংহভাগ ভোটই হল জনতা দলের সমর্থন প্রসূত – এই ঘটনা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। সমতা পার্টির সঙ্গে আঁতাত নিছক প্রতীকী চরিত্রের হওয়ার এবং দু-তিনটি আসন বাদে অন্য সর্বত্র সমতা প্রার্থীরা আমাদের বিরোধিতা করার পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা হাস্যকর যে, আমাদের প্রাপ্ত ভোটের সামান্য অংশও সমতা পার্টির সমর্থনপুষ্ট। তা আরও হাস্যকর এই কারণে যে সমতা পার্টি নিজেই চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর একই সংখ্যক আসন প্রাপ্তির ভিত্তিতে সিপিআই(এম) ও সিপিআই(এমএল)-কে সমান করে দেখাটা বাস্তবতার পরিহাস মাত্র। জনতা দলের সমর্থন থেকে সিংহভাগ ভোট লাভ করেও সিপিআই(এম)-এর প্রাপ্ত ভোট আমাদের ভোটের অর্ধেকও নয়।
দুই জোট, দুই ধারার নির্বাচনী প্রচার ও প্রাপ্ত ভোটের দুটি ধরন – এগুলি প্রত্যেকটিই গুণগতভাবে পৃথক আর এটি উপলব্ধি করতে না পারলে সমস্ত নির্বাচনী বিশ্লেষণই ভাসাভাসা হতে বাধ্য, খুব বেশি হলে তা নিজের সুবিধাবাদকে গোপন করার সুচতুর কৌশল মাত্র।
প্রথম জোটটির ক্ষেত্রে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মূল কথাটিই হল বুর্জোয়া মিত্রের ওপর নির্ভরশীলতা, এবং চরম নির্ভরশীলতা। আর দ্বিতীয় জোটটির মূলকথা বুর্জোয়া মিত্রের সাপেক্ষে সর্বহারা পার্টির চূড়ান্ত স্বাধীনতা। জেনেশুনেই হোক আর না বুঝেই হোক, যে কেউই এটা গুলিয়ে দিতে চান, তিনি সমাজগণতন্ত্রী ও বিপ্লবী কমিউনিস্টদের নির্বাচনী কৌশলের মধ্যকার বুনিয়াদী পার্থক্যকে মুছে দেওয়ার অপরাধে অপরাধী।
জনতা দলের সঙ্গে আঁতাতবদ্ধ হওয়ার বামেদের নির্বাচনী কৌশল জনতা দলের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতার দিকেই তাদের নিয়ে গেছে বলে স্বীকার করেও শ্রী এ কে রায় কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তরটি এড়িয়ে গেছেন যে, আসন ও ক্ষমতার প্রলোভন ছাড়া অন্য কী উদ্দেশ্যে বামেরা জনতা দলের সঙ্গে আঁতাতে আবদ্ধ হয়েছে। স্বকীয় পরিচিতির বিলোপ বা জনতা দলের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা – গত পাঁচ বছরে জনতা দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিকাশের প্রক্রিয়া এটাকেই অবধারিত করে তুলেছে এবং এটা কোনো আকস্মিক বিকাশ নয়। সমস্ত ধরনের প্রতিকূলতার মুখে সিপিআই(এমএল) যদি সমগ্র পর্যায় ধরেই একরোখা হওয়াকেই বেছে নেয় এবং আসন ও ক্ষমতার লালসায় প্রলোভিত হতে অস্বীকার করে, তবে নীতিষ্ঠতাই কি তার ভিত্তি ছিল না? তাঁর নিজস্ব সংগঠন মার্কসবাদী কো-অর্ডিনেশন কমিটি জনতা দলের সঙ্গে যে অনীতিনিষ্ঠ আঁতাত গড়ে তুলেছে সে বিষয়ে এই স্বঘোষিত নীতিবাগীশের নির্লিপ্ত নীরবতা খুব কম করে বললেও রহস্যময়।
জেএমএম ও সমতা পার্টির সঙ্গে আঁতাতের প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সব সময়েই বলে এসেছি যে আমরা কখনই সমতা-জেএমএম সরকারের শরিক হব না, এবং খুব বেশি হলে শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন জানাব। ঐ ধরনের কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে – যদিও প্রথম থেকেই সেই সম্ভাবনা সুদূরপরাহতই ছিল – এটা খুব স্বাভাবিক যে আমূল পরিবর্তনের লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ আমাদের পার্টি দ্রুতই তার বিপ্লবী বিরোধীপক্ষের ভূমিকাতেই ফিরে যেত। সমতা-জেএমএম সরকারের পক্ষে আমাদের শর্ত মেনে নেওয়া ও তা পালন করা সম্ভব ছিল না। ক্ষমতার লালসার পিছু ধাওয়া করাকে প্রথম থেকেই নাকচ করা হয়। তা, জেএমএম ও আমাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের তথ্যগুলি কী?
প্রমত, জেএমএম-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্বাচনের প্রাক্কালে হঠাৎ করে এবং আসন ও ক্ষমতার সুবিধাবাদী ভাগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। ডিগবাজি খেয়ে লালু যাদব যখন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন, তখন থেকেই এই সম্পর্কের সূত্রপাত। ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের এক নতুন জোয়ারের মধ্যে আমরা জেএমএম-এর সঙ্গে একই মঞ্চের শরিক হই। দ্বিতীয়ত, জেএমএম এখনও ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের অগ্রগণ্য প্রতিনিধি হওয়ায় ব্যবহারিক রাজনীতির ক্ষেত্রে তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখাটা অসম্ভব। আমরা অবশ্য যে কোনো যৌথ কার্যকলাপে কংগ্রেসকে বিচ্ছিন্ন রাখার দাবি তুলে পারস্পরিক সম্পর্কটিকে শর্তসাপেক্ষ করে তুলি। আর জেএমএম কংগ্রেসের সঙ্গে মাখামাখি শুরু করলে ঐ যৌথ মঞ্চ থেকেই আমরা বেরিয়ে আসি। তৃতীয়ত, উভয় তরফেই জোট বাঁধার ইচ্ছা প্রকাশ করে কিছু রাজনৈতিক বিবৃতি ছাড়া জোট বা আসন ভাগাভাগি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথাবার্তাই হয়নি। আর ঘটনাক্রমে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী পর্যায়ে তারা জনতা দলের সঙ্গে পুনরায় মাখামাখি শুরু করলে আমরা তাদের সঙ্গে এমনকি প্রতীকী আঁতাতকেও প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিই। পরবর্তীতে তারা যখন পুনরায় ফিরে আসে, সমতা পার্টিই তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। আমরা কখনই তার শরিক হইনি।
নীতি এখানে কোথায় বিসর্জিত হয়েছে, শ্রীযুক্ত রায় কী দয়া করে একটু বলবেন? এর বিপরীতে যিনি স্বতন্ত্র ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন, যিনি ছিলেন বহিরাগত বিহারীদের সাপেক্ষে স্থানীয় মানুষের স্বার্থকে তুলে ধরার প্রেক্ষিত থেকে জেএমএম গঠনের মূল চালিকাশক্তি এবং যিনি ঝাড়খণ্ডকে ‘বিহারের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ’ পর্যন্ত বলতে দ্বিধা করেননি, সেই শ্রীযুক্ত রায় লালু যাদব ঝাড়খণ্ড সম্পর্কে আদ্যোপান্ত ‘বিহারী উপনিবেশবাদী’ অবস্থান গ্রহণ করার পরও তারই পিছু পিছু চলেছেন। নিজেই নীতিকে জলাঞ্জলি দেওয়ার পর শ্রীযুক্ত রায় যদি বামেদের স্বকীয় পরিচিতি বিলোপের জন্য বিলাপ করেন, তবে তার জন্য তিনি দায়ী করছেন কাকে?
আর এখন জেএমএম সানন্দে পুনরায় জাতীয় মোর্চায় ফিরে এসেছে, আর জাতীয় মোর্চা বামফ্রন্ট জোটের মাধ্যমে বামেরা – যার মধ্যে শ্রীযুক্ত রায়ও আছেন – জেএমএম-এর সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে, তবে এটা কতটা নীতিনিষ্ঠ হবে তার উত্তর দেওয়ার কোনো তাগিদ অবশ্য তাঁদের থাকবে না।
কৃষি সংগ্রামের রাজনৈতিক তাৎপর্য
শ্রীযুক্ত তিলক ডি গুপ্ত আমাদের প্রশংসা করেছেন এই বলে যে, “যে সমস্ত গ্রামীণ মেহনতি মানুষকে ঐ দল কৃষি সংগ্রামে সামিল করেছিল, তাদের এক বড় অংশ নির্বাচনে জনতা দলকে ভোট” দেওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের আসন সংখ্যাকে বজায় রাখতে পেরেছি।
প্রথমত আমি বলতে চাই, প্রাপ্ত ভোটের সিংহভাগই – যা পাঁচ বছর আগে প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে তুলনীয় – এসেছে গ্রামীণ মেহনতি জনগণের কাছ থেকে যাদের কৃষি সংগ্রামে সামিল করা হয়েছে। এই অংশ থেকে আমাদের ভোট জনতা দলের অনুকূলে চলে যাওয়ার ঘটনাটি জাহানাবাদ জেলা এবং পাটনা জেলার দু-একটি আসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমাদের গতবারের জেতা আসন বিক্রমগঞ্জ ও বারাচট্টিতে আমাদের ভোট প্রচণ্ডভাবে কমে গেছে ঠিকই, কিন্তু যে ভোট আমাদের দিক থেকে চলে গেছে তা হল মূলত মধ্যশ্রেণীর ভোট, যাঁরা গতবারে আমাদের ভোট দিয়েছিলেন। এবার যে ভোট আমরা পেয়েছি তা শুধুমাত্র ভূমিহীন, দরিদ্র শ্রেণীর কাছ থেকেই এসেছে।
সাহাবাদ অঞ্চলে আমাদের অবস্থানকে আমরা মূলত বজায় রাখতে পেরেছি, দক্ষিণ বিহারে অল্প উন্নতি ঘটিয়েছি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটাতে পেরেছি। জাহানাবাদের বিপর্যয় সেখানকার গুরুতর সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এর পেছনে আবার কারণ হিসাবে থেকেছে রাজনৈতিক দিশা পরিবর্তন, অর্থাৎ কৃষি সংগ্রামে মেহনতি মানুষকে সমাবেশিত করার দিশা থেকে সরে যাওয়া। এই দিকভ্রান্তির পেছনে আবার রয়েছে এমন এক পরিস্থিতি যেখানে পার্টিকে এমসিসি-পার্টি ইউনিটির আক্রমণের মোকাবিলায় নামতে হয়। আমাদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত শক্তিগুলিকে প্ররোচিত করা ছিল লালু যাদবের এক সুপরিকল্পিত কৌশলেরই অঙ্গ, এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলিকে মিটিয়ে নেওয়ার প্রয়াসে আমরা এমসিসি-পার্টি ইউনিটির দিক থেকে কোনো সাড়া পাইনি। এছাড়াও জাহানাবাদে প্রশাসনিক বৈরিতাও ছিল তুঙ্গে।
একমাত্র নির্বাচনের পরেই আমরা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে জাহানাবাদে পাঠাতে পারি, কর্মীবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করি ও পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে কিছু কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং মেহনতি জনতাকে কৃষি সংগ্রামে সামিল করার পথে ফিরে যেতে সক্ষম হই।
জাহানাবাদে একটি বিশেষ ব্যতিক্রম এবং নৈরাজ্যবাদীরা আখেরে কীভাবে শাসক শ্রেণীরই সেবা করে তার একটি বৈশিষ্ট্যমূলক উদাহরণ। জাহানাবাদে এমসিসি-পার্টি ইউনিটি অবশ্যই আমাদের পার্টির যথেষ্ট ক্ষতি করেছে যা জনতা দলের স্বার্থেই গেছে। কিন্তু নির্বাচন বয়কটের ওপর ভিত্তি করে তারা কি কোনো বিকল্প রাজনৈতিক মডেলের বিকাশ ঘটাতে পেরেছে? তাদের নির্বাচন বয়কটের আহ্বান দুঃসাহসিকতাবাদের দিকে মোড় নেয় এবং শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। স্থানীয় সংবাদ থেকে জানা যায়, এবং বেশ কিছু সাংবাদিকও লক্ষ্য করেছেন যে তাদের কর্মী ও সমর্থক বাহিনীর ব্যাপক অংশ জনতা দলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকে বিচার করলে, তীব্র রাজনৈতিক আলোড়নের সময়ে এই সমস্ত গোষ্ঠীগুলি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছিল।
বিপরীতে আমাদের নির্বাচনী সমর্থনের মধ্যে আমাদের পার্টি পরিচালিত কৃষি সংগ্রামেরই রাজনৈতিক প্রতিফলন ঘটেছে। শ্রীযুক্ত গুপ্ত এই বিষয়টিকেই স্বীকার করেন যখন তিনি বলেন, “এটা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা যে, এই প্রথমবার সিপিআই(এমএল) গোষ্ঠী লালু হাওয়ার মধ্যেও উত্তর বিহারের সমতলে দুটি আসন লাভ করেছে। এটা দেখিয়ে দেয় যে কৃষি সংগ্রাম নকশালপন্থীদের প্রথাগতভাবে শক্তিশালী অঞ্চল দক্ষিণ ও মধ্য বিহার ছাড়িয়ে অন্যত্রও বিস্তার লাভ করেছে।”
এর অর্থ এই নয় যে জাহানাবাদে আমাদের দুর্বলতাকে আমি খাটো করে দেখছি। চরম প্ররোচনা সত্ত্বেও কৃষি সংগ্রামের দিশাকে আঁকড়ে থাকাই পার্টির উচিত ছিল, জাহানাবাদে তা করতে আমরা একেবারেই ব্যর্থ হয়েছি। আমি যা বলতে চাই তা হল, “যে সমস্ত গ্রামীণ মেহনতি মানুষকে ঐ দল কৃষি সংগ্রামে সামিল করে, তাদের এক বড় অংশ জনতা দলকে ভোট দেয়” – এই সূত্রায়ন মূলগতভাবে ভুল। বিপরীতে বলা যায়, যে সমস্ত অঞ্চলে কোনো না কোনো কারণে পার্টি কৃষি সংগ্রামে গ্রামীণ জনতাকে সামিল করার বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়, কেববমাত্র সেই সমস্ত অঞ্চলেই এটি ঘটেছে।
শ্রীযুক্ত গুপ্ত আমাদের “মাত্রাধিক প্রত্যাশার” কথাও উল্লেখ করেছেন। একথা সত্যি যে প্রত্যাশার তুলনায় আমাদের ফলাফল যথেষ্টই খারাপ হয়েছে। আমরা ১২-১৩ লাখ ভোট এবং ১০-১২টি আসনের প্রত্যাশা করেছিলাম, যা আমাদের রাজ্য পার্টির স্বীকৃতি এনে দিত। এই লক্ষ্যমাত্রা পার্টির আয়ত্তের একেবারে বাইরে ছিল এমন নয়। প্রশাসনিক বৈরিতা, পার্টির এক প্রবীণ নেতার হত্যা, সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি অস্বাভাবিক বিলম্বিত হওয়ার ফলে বৃহৎ পার্টিগুলির কৌশলগত সুবিধালাভ, মহারাষ্ট্র-গুজরাত নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার ফলে জনতা দল ও বিজেপির মধ্যে ভোটের তীব্র মেরুকরণ ঘটে যাওয়া, রিগিং, ইত্যাদি – এ সমস্ত কিছুই আমাদের নির্বাচনী সম্ভাবনাকে বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করার পিছনে কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনি। একেবারে শুরুতেই আমরা বলেছিলাম যে ২৫টি আসনে আমরা শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। এর মধ্যে ৬টি আসনে আমরা বিজয়ী হই, দ্বিতীয় স্থান লাভ করি ৮টি আসনে এবং অন্য দশটি আসনে ১৪০০০ থেকে ২৫০০০ ভোট লাভ করি। ২৫তম আসনটি হল হিলসা, এখানে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার ফলে আমাদের সম্ভাবনা প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রথম পর্যায়ে যে সমতা পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারেকাছেও ছিল না, দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে আসে। আমাদের ২৫টি আসনের প্রাথমিক তালিকায় অবশ্য ভোরের স্থানে ছিল বারাচট্টি, আর সেটাই একমাত্র ব্যতিক্রম। আমি বিশদভাবেই দেখিয়েছি যে, এই ধরনের বাস্তব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রত্যাশাকে কখনই “মাত্রাধিক” বলা যায় না।
একথা বলার পরও আমি বলতে বাধ্য যে কিছু জায়গায় মাত্রাধিক প্রত্যাশা অবশ্যই ছিল, যে প্রত্যাশা গড়ে উঠেছিল কিছু ভাসাভাসা বিষয়ীগত উপাদানকে ভিত্তি করে। যেমন উচ্চবর্ণের নেতিবাচক ভোট অর্জনের প্রত্যাশা, যেখানে সমতা পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই সেখানে কুর্মী জাতির মধ্যে সমতা পার্টির ভিত্তির কথা বিবেচনা, বিশেষ বিশেষ প্রার্থীর জাতের সমর্থন লাভের আকাঙ্খা, ইত্যাদি। এই সমস্ত আকাশকুসুম চিন্তা আসনের প্রত্যাশাকে ২৫-৩০ বা তারও বেশিতে নিয়ে যায়। আমি আবার বলছি এটা কখনই পার্টির ঘোষিত অবস্থান ছিল না, এটা ছিল পেটিবুর্জোয়া আত্মগত ধারণা এবং সংসদসর্বস্বতার অভিব্যক্তি যা নেতৃত্বের একটি অংশকে এবং ব্যাপক কর্মীবাহিনীকে আচ্ছন্ন করে। প্রত্যেকবারই যখন নির্বাচন এগিয়ে আসে এবং যখন নির্বাচনী উত্তাপ চরমে ওঠে, তখন অনেকেই অনেক অলীক স্বপ্ন দেখতে থাকেন, কোনো মার্জিত মূল্যায়নে কান দিতেই চান না। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিচ্যুতি, যা ভগ্নোদ্যম ও হতাশায় পরিণতি লাভ করে। এই প্রবণতার বিরুদ্ধে পার্টিকে ধারাবাহিক সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
শ্রী গুপ্ত বিশেষ সমালোচনার জন্য আলাদাভাবে বেছে নিয়েছেন সমতা পার্টির সঙ্গে – যারা তাঁর মতে জনতা দলের চেয়েও অধিকতর দক্ষিণপন্থী – জোট বাঁধার আমাদের তথাকথিত অনীতিনিষ্ঠ প্রয়াসকে, আর এটাকে তিনি সিপিআই-সিপিআই(এম) ধারার রাজনৈতিক সুবিধাবাদের সমগোত্রীয় বলে মনে করেন। শ্রী গুপ্ত নিজেই স্বীকার করেছেন, সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এর তুলনায় আমরা নিজস্ব শক্তির ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচনী লড়াই পরিচালনা করেছি। তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে উত্তর বিহারে আমাদের বিজয় কৃষি সংগ্রামের ক্রমবর্ধমান বিস্তারকেই চিহ্নিত করে। এই জোটটি সম্পর্কে বলতে গিয়েও তিনি চতুরানন মিশ্র এবং এ কে রায়ের থেকে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছেন, এবং শুধুমাত্র “অনীতিনিষ্ঠ প্রয়াসের” কথাই বলেছেন। কেননা তিনি ভালোভাবেই জানেন যে প্রতীকী চরিত্র ছাড়া কার্যত জোটের আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। জনতা দলের সঙ্গে সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এর “সম্পূর্ণ সমঝোতার” পরিবর্তে ঐ জোটের প্রতীক-সর্বস্বতায় পর্যবসিত হওয়াটাই দেখিয়ে দেয় যে আমাদের পার্টি তার চূড়ান্ত স্বাধীনতাকে তুলে ধরার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে, যে সমস্ত কেন্দ্রে পার্টি ঐতিহাসিকভাবে কুর্মী কুলাকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত সেই সমস্ত অঞ্চল সহ কৃষি সংগ্রামের সমস্ত কেন্দ্রগুলিতে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সমতা পার্টির ছোটো শরিক হয়ে কাজ করতে, যৌথ ইস্তাহার, কর্মসূচি ও নির্বাচনী অভিযানের শরিক হতে সে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
সমতা পার্টির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক
সমতা পার্টি সম্পর্কে ১৯৯৪ আগস্ট পাটনায় রাজ্য ক্যাডার সম্মেলনে আমি যা বলেছিলাম, তা মনে করা যাক – “জনতা দল (জর্জ) সম্পর্কে আমি একটি বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চাই। যাদবদের অত্যাচার ও আধিপত্যের বিরোধিতার নামে নীতীশ যাদবদের বিরুদ্ধে অন্যান্য জাত বিশেষত কুর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছে। এরকম কোনো ধারণার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারি না। ... বিহারে যাদবদের একটি বড় অংশই দরিদ্র ও মধ্য কৃষক। ... আমরা যাদব গোষ্ঠীর মধ্যে এক মেরুকরণ ঘটানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ... আমরা নীতীশের চিন্তাধারায় পরিচালিত হতে পারি না। তাদের সঙ্গে আমাদের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বাস্তবে বিষয়টি বরং উল্টো। যে পথে সে কুর্মী জাতের সমর্থন আদায় করছে, সে পথে কুর্মী কুলাকদের সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম রয়েছে।” (লোকযুদ্ধ, ১৫-৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৪)
পরে ১৯৯৫-এর ফেব্রুয়ারিতে আসন রফা সম্পর্কিত আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমি লিখি, “আমরা সমতা পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। আমরা প্রকৃতপক্ষে যা চেয়েছিলাম তা হল, লালু বনাম নীতীশের রাজনীতি বা যাদব-কুর্মী বিভাজনকে দূরে সরিয়ে রেখে সমাজ পরিবর্তনের একটি কর্মসূচির ভিত্তিতে সমতা পার্টিকে আমাদের পক্ষে নিয়ে আসা। অবশ্য আমাদের এই প্রচেষ্টা এখনও সাফল্য লাভ করেনি, কেননা সমতা পার্টির নেতৃত্ব জাতপাতের চালবাজির মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসীন হতে চান। তাঁরা বরং আমাদের পার্টিকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
“আমাদের অর্থাৎ কমিউনিস্টদের কাছে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতার অর্থ আমাদের স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেওয়া নয়, আর আমাদের বিকাশ ও বিস্তৃতির মূল্যে ঐ ধরনের কোনো দলকে ক্ষমতায় আসীন হতে আমরা সাহায্য করতে পারিও না।” (লোকযুদ্ধ, ১-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)
এখানেও আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, জনতা দলে ভাঙ্গন ঘটার কয়েক মাস আগে থেকেই যখন আমরা স্বায়ত্ততা রক্ষার জন্য যৌথ সংগ্রামে সামিল হই, তখন থেকেই জর্জ ফার্ণান্ডেজের এইচএমকেপি-র সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সূচনা। এ সত্ত্বেও বিহারে সমতা পার্টির নেতৃত্ববৃন্দ আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যৌথ কার্যকলাপ ও আঁতাতের ব্যাপারে বিরূপ ছিলেন। তাঁরা প্রথমে সিপিআই ও সিপিআই(এম) এবং পরে আনন্দমোহনের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা চালান। আমরা তাদের পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিই যে বিপিপি-র সঙ্গে সমস্ত ধরনের সম্পর্ক ছেদ না করলে তাদের সঙ্গে আমাদের আঁতাত সম্ভবপর নয়। একমাত্র প্রকাশ্যে বিপিপি-কে বর্জন করার পরই তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সূত্রপাত ঘটে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এক সেমিনারের মধ্য দিয়ে, আর ঐ সেমিনারে দলিত প্রশ্নে আমার ও নীতীশের বক্তব্যের মধ্যকার পার্থক্য কোনো আগ্রহী শ্রোতার মনোযোগই এড়িয়ে যায়নি। সমতা পার্টির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে কোনো গোপনীয়তা ছিল না। স্পষ্টতই তারা যখন জনতা দল ও সিপিআই-সিপিআই(এম)-এর মধ্যকার সম্পর্কের মতো আমাদেরও তাদের ছোটো শরিকে পরিণত করতে চাইল এবং বিজয়ের সম্ভাবনাকেই আসন বণ্টনের মাপকাঠি করে তুলল তখনই আমরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের সিদ্ধান্ত নিই। আমরা তাদের স্পষ্টভাবেই বলি যে আন্দোলনের প্রয়োজনের দিক থেকে যে সমস্ত আসন আমাদের কাছে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেই সমস্ত আসনেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। বিজয় লাভ বা প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ এসবই আমাদের কাছে অবান্তর। আলোচনা ভেঙ্গে যায় এবং আমরা স্বীয় শক্তির ওপর ভর করেই লড়াইয়ের ময়দানে নামি। কেবলমাত্র একেবারে শেষ মুহূর্তে আঁতাতের জন্য তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মরিয়া তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রতীকী আঁতাতে সম্মত হই। সমতা পার্টির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা গড়ে তোলা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ঐ আঁতাতের নিছক প্রতীকে পর্যবসিত হওয়া অবধি সমগ্র প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ যে কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের কাছেই প্রমাণ করবে যে, “অতীতে ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে বারংবার পরিলক্ষিত রাজনৈতিক সুবিধাবাদের” নেতিকরণের ওপরই আমাদের কৌশল প্রতিষ্ঠিত ছিল।
কাজেই সমঝোতা গড়ে ওঠার সমগ্র প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো অনীতিনিষ্ঠতা ছিল না। অবশ্য, সমতা পার্টির শ্রেণী চরিত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ তার সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তোলার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারেন। এখানে ব্যবহারিক রাজনীতির রূঢ় বাস্তবতাকে বিস্মৃত হলে চলবে না। গত পাঁচ বছরে জনতা দল রাজের বিরুদ্ধে আমরাই ছিলাম একমাত্র বাম বিরোধীপক্ষ। সিপিআই ও সিপিআই(এম) লালু যাদবের পাশে ছিল, আর এমসিসি ও পিইউ আমাদের নিঃশেষ করতে বদ্ধপরিকর ছিল। লালু যাদব আমাদের বিধায়ক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাঙ্গন ঘটায় এবং সাতজন বিধায়কের মধ্যে চারজনকে আমরা হারাই। মণ্ডলকে হাতিয়ার করে সে পশ্চাদপদদের মধ্যে আমাদের ভিত্তির ক্ষয় ঘটাতে থাকে। পার্টি কর্মীদের একটি অংশ আমাদের ত্যাগ করে জনতা দলের পক্ষে যোগ দেয়। সাধারণভাবে যে ধারণাটি গড়ে ওঠে তা হল যে জনতা দল ও এমসিসি আমাদের সামাজিক ভিত্তিতে ধ্বস নামিয়েছে এবং লালু যাদব ঔদ্ধত্যের সঙ্গে ঘোষণা করলেন যে আমাদের পার্টি চিরদিনের মতো শেষ হয়ে গেছে। এমসিসি ও পিইউ সোল্লাসে একই কথা প্রচার করতে থাকে। সত্যিসত্যিই চারদিক থেকেই আমরা ঘেরাও-এর মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।
আঁতাত সম্পর্কে লেনিনীয় কৌশল
এই পরিস্থিতিতে এই সংকটকে প্রতিহত করতে এবং পার্টিকে চাঙ্গা করে তুলতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। প্রথম কাজটি অবশ্যই ছিল কৃষি সংগ্রামকে তীব্রতর করে তোলা এবং নতুন নতুন অঞ্চলে তাকে ছড়িয়ে দিয়ে একেবারে লালু যাদবের ঘাঁটি উত্তর বিহার পর্যন্ত তাকে বিস্তৃত করা। দ্বিতীয়ত, আমরা সামাজিক ন্যায়ের শ্লোগানের বিপরীতে সামাজিক পরিবর্তনের স্লোগানকে তুলে ধরি এবং পাটনায় এক বিশাল জনসমাবেশ সংগঠিত করি। তৃতীয়ত, লড়াইকে জনতা দলের অভ্যন্তর পর্যন্ত বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আমরা ১৯৭৪-এর আন্দোলনের মেজাজকে তুলে ধরি, আমাদের ছাত্র সংগঠনকে সক্রিয় করে তুলে জঙ্গী আন্দোলনে সামিল করি এবং দুর্নীতি ও ১৯৭৪-এর আন্দোলনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনতা দলের মধ্যকার সমস্ত গণতান্ত্রিক ব্যক্তির কাছে আবেদন রাখি। আমরা জর্জ ফার্ণান্ডেজের প্রস্তাবে সাড়া দিই, কেননা তার মধ্যে জনতা দলের এক আসন্ন ভাঙ্গনের ইঙ্গিত ছিল। কয়েক মাস পরে ভাঙ্গন সত্যি সত্যিই ঘটল এবং যাঁরা বেরিয়ে এলেন তাঁরা ১৯৭৪-এর আন্দোলনের ইস্যুটিকে ধরেই বেরিয়ে এলেন। বিহারে জনতা দলই আমাদের মূল প্রতিপক্ষ হওয়ায় তার মধ্যে যে কোনো ভাঙ্গনকেই কাজে লাগিয়ে নেওয়ার কৌশল সম্পূর্ণভাবেই ন্যায়সঙ্গত, তা আরও এই কারণে যে ঐ ভাঙ্গন তীব্রতর হয়ে ওঠার মূলে আমরাই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিলাম।
এটা মনে রাখা দরকার যে পুরো পাঁচ বছর ধরে জনতা দলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কংগ্রেস ও বিজেপির মতো দক্ষিণপন্থী বিরোধী পার্টিগুলির সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্রব ছিল না। আমাদের দিক থেকে আমরা সর্বদা বামেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিকাশের ওপরই অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি। ঐ ধরনের যে কোনো সুযোগকেই আমরা আঁকড়ে ধরতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারে জনতা দল নিজ শক্তির বলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার সিপিআই-এর আকাঙ্খা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায়, সিপিআই বিরোধী আসনে বসতে বাধ্য হয়েছে। আর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে বাম ঐক্যের প্রক্রিয়া আবার গতিশীল হতে শুরু করেছে।
স্বেচ্ছা-বিচ্ছিন্নতাকে স্বাধীনতার সমার্থক করে তুললে তা খুবই বিপ্লবী শোনাতে পারে, কিন্তু আদতে তা শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা ছাড়া অন্য কিছু নয় যা একমাত্র আন্দোলনের ধ্বংস সাধনই করতে পারে। স্বল্পস্থায়ী ও অনির্ভরযোগ্য হলেও গণচরিত্রসম্পন্ন মিত্রশক্তির সন্ধানে থাকা এবং শত্রু শিবিরের যে কোনো ভাঙ্গনকেই কাজে লাগিয়ে নেওয়াটা মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সমতা পার্টি ও জেএমএম-এর সঙ্গে আঁতাতবদ্ধ হওয়ার আমাদের প্রচেষ্টা ঐ কৌশলের বাস্তব প্রয়োগ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর লালু যাদবের পাঁচ বছরের জমানায় কেবলমাত্র ঐ সংক্ষিপ্ত পর্যায়েই আমরা তাকে বেকায়দায় ফেলতে সক্ষম হই এবং তাঁকে বহু বিনিদ্রি রজনী যাপনে বাধ্য করি। জোটের মধ্যেও সর্বহারা পার্টির চূড়ান্ত স্বাধীনতা বজায় রাখাটা ছিল পার্টির অনুশীলনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় এবং সিপিআই(এমএল) তা থেকে অক্ষত ও বিজয়ী হয়েই বেরিয়ে এসেছে। এমনকি আমাদের চরম শত্রুকেও স্বীকার করতে হয়েছে যে সিপিআই(এমএল)-এর ভোটের ভিত্তি তার নিজস্ব শক্তি ও গ্রামীণ দরিদ্রদের কৃষি সংগ্রামের শক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
শেষন উপাখ্যান
বিহারে “অবাধ ও সুষ্ঠু” নির্বাচন চালু করার জন্য শেষনের পদক্ষেপগুলিকে আমরা যে সমর্থন করেছিলাম সে কথা আমরা অস্বীকার করি না, কারণ বিহার এমনই একটি রাজ্য যেখানে সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিই তামাশায় পরিণত হয়। কিন্তু ঐ পদক্ষেপগুলির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও আমাদের জানা ছিল। এক আদর্শ বুর্জোয়া ধারণায় “অবাধ ও সুষ্ঠু” নির্বাচনের অর্থ হল শুধুমাত্র বুথ দখলের মতো প্রকাশ্য জোরজুলুমগুলি থেকে মুক্ত হওয়া। অন্য কথায়, তা হল পুঁজির অবাধ ভূমিকার দ্বারাই ফলাফল নির্ধারিত হওয়া। কাজেই কোনো বুর্জোয়া সমাজে “অবাধ ও সুষ্ঠু” নির্বাচন মূলগত প্রকৃতিতে বুর্জোয়াই থেকে যায়।
তবে স্বেচ্ছাচারীভাবে নির্বাচনকে বিভিন্ন দিনে ভেঙ্গে দেওয়া বা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলিকে আমরা কিন্তু কখনই সমর্থন করিনি, এবং একটি বিবৃতিতে আমরা বলি যে ঐ সমস্ত কার্যকলাপ কংগ্রেস(ই)-কে সহায়তা করার লক্ষ্যেই পরিচালিত। সমতা পার্টির নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবমতো নির্বাচনী দুর্নীত সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কাছে কংগ্রেস(ই) ও বিজেপির সঙ্গে কোনোরকম যৌথ প্রতিনিধিত্বের অংশীদার হতেও আমরা অস্বীকার করি। কাজেই এই বিষয়ে আমরা অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকে নীরব সমর্থন জানিয়েছি আমাদের বিরুদ্ধে শ্রীগুপ্তর এই অভিযোগ সঠিক নয়।
লালুর জনমোহিনী ক্ষমতার স্বরূপ
শ্রীগুপ্ত লালুর বিজয়ের পিছনে যে সমস্ত কারণ খুঁজে পেয়েছেন সেগুলি হল লালুর ব্যক্তিগত জনমোহিনী ক্ষমতা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর একাত্মবোধ, দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত সংখ্যাগরিষ্ঠ নীরব মানুষকে ভাষা দেওয়া, ইত্যাদি। তা বেশ, কিন্তু লালুর বিজয়কে আমরা কীভাবে দেখব? এ কথা ঠিক যে, সিপিআই(এমএল)-এর ঘাঁটিগুলি ছাড়া অন্য সমস্ত জায়গায় জনতা দল গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে, এবং গ্রামীণ দরিদ্র জনসাধারণ তাঁর বাকচাতুরিতে ভেসে গেছেন, ঠিক যেমনভাবে তাঁরা একসময়ে ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন জানাতেন বা বর্তমানে রামারাও ও জয়ললিতাকে সমর্থন করে থাকেন। আমাদের পার্টি নির্বাচনে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের আত্মঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে, যা মর্যাদাপূর্ণ ও উন্নত জীবনের জন্য তাঁদের আকাঙ্খাকেই প্রতিফলিত করে। কিন্তু শুধুমাত্র এইটুকুই জনতা দলের বিজয়ের তাৎপর্যকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারে না। জনতা দলের প্রতি প্রশাসনের সক্রিয় মদতের অভিযোগটি যদি উপেক্ষাও করা যায়, তবুও বলতে হবে লালু যাদব সহ অন্য কেউই প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনতা দলের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনেননি। বিহার প্রশাসন বৃহৎ জমিদারদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত – শ্রীগুপ্ত নিজেও সেকথা উল্লেখ করেছেন – এই পরিপ্রেক্ষিতে দরিদ্রদের এই পরিত্রাতার সাপেক্ষে প্রশাসনের এই আচরণের তিনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
একথা বিস্মৃত হলে চলবে না যে জনতা বিধায়কদের অনেকেই দাগী আসামী। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই হল উচ্চবর্ণের, বিশেষত রাজপুত জাতির, এবং কুখ্যাত সামন্ততান্ত্রিক পশ্চাদপটসম্পন্ন। নকশালপন্থীদের হিংসা থেকে উচ্চবর্ণের মানুষদের কেবলমাত্র তিনিই রক্ষা করতে পারেন, এই কথা বলে লালু যখন উচ্চবর্ণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন, তখন তাঁর অন্য রূপটিও প্রকাশ হয়ে পড়ে।
তাঁর পাঁচ বছরের রাজত্বে দুহাতে দাক্ষিণ্য ও আনুকূল্য বিতরণ করে তিনি কয়েকজন শক্তিশালী সামন্ত প্রভুকে তাঁর দিকে টেনে নেন, যারা আগে কংগ্রেস(ই) ও বিজেপির সঙ্গে ছিল। মুসলিমদের সমর্থন লাভের জন্য ধর্মীয় মৌলবাদের প্রতি আবেদনকেও তিনি চরমে নিয়ে যান এবং দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মুসলিম সম্ভ্রান্ত সম্প্রদায়ও দৃঢ়ভাবেই তাঁকে সমর্থন জানায়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, লালুর ব্যক্তিগত জনমোহিনী ক্ষমতার অন্তরালে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন শক্তিগোষ্ঠী এবং উচ্চবর্ণের এক ব্যাপক অংশ সহ আধিপত্যকারী জাতগুলির ভূস্বামীদের এক জোট। এই সামাজিক গতিসূত্রটিকে উপলব্ধি করতে না পারলে কেউ লালুর বিজয়ের একপেশে, উদারনীতিবাদী ও সমাজগণতান্ত্রিক ব্যাখ্যার ফাঁদে আটকে পড়তে পারেন।
লালু যাদব বিহারে ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী সংগ্রামের প্রতি শাসক শ্রেণীর প্রত্যুত্তর ছাড়া অন্য কিছু নন। লালুর পিছনে প্রশাসন এবং প্রধান প্রধান শক্তিগোষ্ঠীগুলির ব্যাপক অংশের সমর্থনের রহস্যও রয়েছে এইখানেই। তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে লালু যাদব যথেষ্ট সচেতন এবং আমরা দেখতে পাই যে তিনি একই সঙ্গে উচ্চবর্ণের ভূমিস্বার্থের প্রতিভূদের কাছে নিজেকে হিংসাপরায়ন নকশালপন্থীদের বিকল্প হিসাবে তুলে ধরছেন। যখন তিনি দাবি করেন যে নকশালপন্থীরা যেখানে দরিদ্রদের হাতে বন্দুক তুলে দিয়েছে, সেখানে তিনি তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন বইপত্র, তখন তিনি চরম হিংসাসঙ্কুল ও সশস্ত্র বিহারী সমাজে জনগণকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নিরস্ত্র করে তোলার তাঁর উদ্দেশ্যকেই উন্মোচিত করে ফেলেন।
এক কমরেড বিদ্রুপ করে লোকযুদ্ধে লিখেছেন যে আমাদের নির্বাচনী অনুশীলন হল এলাকাভিত্তিক ক্ষমতা দখলের রাজনীতি থেকে এলাকাভিত্তিক আসন দখলে উত্তরণ। কিন্তু গভীর বিশ্লেষণ দেখিয়ে দেয় যে আমাদের নির্বাচনী সাফল্য এবং আমাদের সামন্ত-বিরোধী সংগ্রাম অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ। যে সমস্ত অঞ্চলে আমরা বিজয়ী হয়েছি সেই সমস্ত অঞ্চলেই সংগ্রাম ছিল সর্বাপেক্ষা তীব্র, আর গত তিন মাস যদি কোনো ইঙ্গিত বহন করে থাকে, তবে আমাদের বিজয় সংগ্রামকে তীব্রতর করে তুলেছে মাত্র। বাস্তবে এই এলাকাগুলিই সংসদীয় ও সংসদ-বহির্ভূত সংগ্রামের সমন্বয়ের অনুপম দৃষ্টান্ত। বিধানসভায় ক্ষুদ্র শক্তি হয়েও গত পাঁচ বছরে আমরা বিহার রাজনীতির মূল ধারার মধ্যেই থেকেছি। আগামী পাঁচ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না।