(লিবারেশন, নভেম্বর ১৯৮৮ থেকে)
আমাদের পার্টির চতুর্থ সর্বভারতীয় কংগ্রেসে এক বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে এই আহ্বান জানানো হয় যখন ভারতের বাম আন্দোলন এক দীর্ঘ সময় পর বড় ধরনের অগ্রগতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এই শ্লোগানের অন্তর্বস্তু ও তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়, “বর্তমান পর্যায়ে সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বাধীন বিকল্পের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে প্রধানত সংগ্রামের এবং গৌণত ঐক্যের। আর ঐক্যের এই দিকটির অর্থ হল রাজীব হঠাও আন্দোলনে যতদূর সম্ভব সহযোগিতা। এখন রাজনৈতিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় বামফ্রন্ট সরকারগুলিকে উৎখাত করার জন্য কেন্দ্রের সরাসরি আক্রমণ, জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের জোয়ার এবং ফলস্বরূপ আমাদের শক্তি বলিষ্ঠতর হয়ে ওঠার দরুণ পরিস্থিতির বিরাট পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই সময়ে সংগ্রামের দিকটি গৌণ ও ঐক্যের দিকটি প্রধান হয়ে উঠতে পারে এবং সম্পূর্ণ নতুন এক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ব্যাপকতর বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশন গড়ে ওঠার পরিস্থিতি পেকে উঠতে পারে”।
এখন বিভিন্ন দিক থেকে পার্টি কংগ্রেসের এই স্লোগানকে বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথমত আমাদের দেখতে হবে যে একটি স্লোগান সূত্রায়নে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত। একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে, শ্রেণীশক্তি ভারসাম্যের এক নির্দিষ্ট অবস্থায় যা অর্জন সম্ভব কেবলমাত্র তার উপর ভিত্তি করেই কি আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত, না কি আশু বাস্তবায়নের সম্ভাবনা-নিরপেক্ষভাবে স্লোগানকে বিকাশমান প্রবণতাগুলির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে? আমাদের স্লোগান কি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে বাস্তবায়নের সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করবে নাকি তাকে সমস্ত সম্ভাব্য বিকাশকে হিসাবে রাখতে হবে? মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শেখায় যে আমাদের দিশার, আমাদের অন্তিম লক্ষ্যের অভিমুখে আমরা যতদূর পর্যন্ত নজর করতে পারি তার উপরই আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে স্থাপন করা উচিত। এর অর্থ হল, আমাদের স্লোগানকে হতে হবে বাস্তবসম্মত এবং এতে যেমন বর্তমানের নির্দিষ্ট কর্তব্যকর্মগুলি থাকবে, তেমনি তাতে আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার পথের দিশাও থাকবে। একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে যা অর্জন করা সম্ভব, শুধুমাত্র তাতে আমাদের স্লোগান ও কর্তব্যকর্মকে সীমাবদ্ধ রাখা হল প্রয়োজনবাদ। এর সাথে মার্কসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অনুরূপভাবে, বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্নভাবে এবং আত্মগত আকাঙ্খা থেকে স্লোগান দেওয়া রাজনৈতিক জুয়াখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। “কমিউনিস্টরা বর্তমানের মধ্যে ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করে” – এঙ্গেলসের এই বিখ্যাত উক্তিটি হল স্লোগান সূত্রায়নে আমাদের পরিচালনকারী দিশা। যারা বর্তমানের মধ্যে কেবলমাত্র বর্তমানেরই প্রতিনিধিত্ব করে সেই সংশোধনবাদীদের থেকে এবং যারা বর্তমানকে অস্বীকার করে নিছক ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্নে বিভোর থাকে সেই কল্পনাবিলাসীদের থেকেও আমাদের নিজেদের পার্থক্য করতে হবে। ব্যাপক জনগণ যাতে আমাদের স্লোগান থেকে আমাদের দিশাকে বুঝতে পারেন তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
আমি মনে করি এক বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশন গড়ে তোলার জন্য আমাদের স্লোগান মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই স্লোগান একদিকে বাম ও বাম ঘেঁষা পার্টিগুলির সঙ্গে আন্তঃক্রিয়া ও যৌথ কার্যকলাপ গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টাকে গতি দেবে, অপরদিকে সমাজগণতন্ত্রীদের ‘বামফ্রন্ট সরকার কেন্দ্রিক বাম ও গণতান্ত্রিক বিকল্প’-এর বিপরীতে আমাদের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক বিকল্পের দিশাকে স্পষ্ট করবে। এক নতুন ভিত্তিতে – জঙ্গী গণআন্দোলনের ভিত্তিতে এক বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশন গড়ে তোলার জন্য আমাদের স্লোগান, আমরা সাধারণত যেভাবে ভেবে থাকি, ঠিক সেভাবে বাস্তবায়িত নাও হতে পারে, কিন্তু তা নিশ্চিতভাবেই বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে এক নতুন মেরুকরণ ঘটাবে। এই মেরুকরণ ঠিক কীভাবে ঘটবে তা আমরা এই মুহূর্তে ভবিষ্যতবাণী করতে পারি না। কিন্তু এটি নিশ্চিত যে বিপ্লবী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে এটি আমাদের আর এক ধাপ এগিয়ে দেবে।
এখানে স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্ন ওঠে তা হল সিপিআই(এম)-এর প্রস্তাবিত বাম ও গণতান্ত্রিক বিকল্পের সাথে আমাদের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক বিকল্পের ধারণার বুনিয়াদী পার্থক্যকে স্বীকার করা হবে কি না। এই বুনিয়াদী পার্থক্যকে স্বীকার করলে ধারণা দুটির মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে মুখ্য এবং যৌথ কার্যকলাপের স্থান হবে এর অধীন। বামফ্রন্ট সরকারগুলির প্রতি আমাদের নির্দিষ্ট কৌশল সম্পর্কে বিতর্ক চলতে পারে এবং তা প্রয়োজনীয়ও হতে পারে। কিন্তু সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে ঐক্যের নামে, বামফ্রন্ট সরকারগুলির মূল্যায়নের নামে মৌলিক পার্থক্যকে গুলিয়ে দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা আত্মঘাতী হতে বাধ্য। আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা দেখায় যে ব্যবহারিক বাস্তবতার নামে এই মৌলিক পার্থক্যকে কেউ গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি পার্টি মানসিকতা ও বিপ্লবী মানসিকতা হারাবেন এবং বিভিন্ন ধরনের বিলোপবাদী প্রবণতার শিকার হবেন।
এক বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টিতে আমরা বিকাশের যে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষ করছি এবং আমাদের শ্লোগানে যা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছি তা কি বাস্তব? এই প্রশ্ন গভীর অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণের দাবি করে।
আমাদের শ্লোগানের ঐতিহাসিক ভিত্তি কী? সিপিআই, সিপিআই(এম) ও সিপিআই(এমএল) হল একদা ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যকার তিনটি ধারা। ১৯৬৪ সালে, জাতীয় গণতন্ত্র বনাম জনগণতন্ত্রের স্লোগানকে কেন্দ্র করে পার্টি সিপিআই ও সিপিআই(এম)-এ বিভাজিত হয়ে যায়। সিপিআই(এম)-এর মধ্যে একেবারে শুরু থেকেই জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের দুই কৌশলগত লাইনের মধ্যে – সুবিধাবাদী লাইন ও বিপ্লবী লাইনের মধ্যে – সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। কৌশলগত লাইনের এই সংগ্রাম পরবর্তীতে নকশালবাড়ির সংগ্রাম ও যুক্তফ্রন্ট সরকারের মধ্যে নির্দিষ্ট সংঘাতের সুস্পষ্ট রূপ নেয় এবং আমাদের পার্টি সিপিআই(এমএল)-এর জন্ম হয়। সুবিধাবাদী ও বিপ্লবী – এই দুই ধারার মধ্যকার সংগ্রাম আজও সমাজগণতন্ত্র ও বিপ্লবী গণতন্ত্রের মধ্যকার সংগ্রামের মধ্যে অব্যাহত।
ইতিমধ্যে পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। ভারতীয় শাসকশ্রেণী আর লাল সরকারের, বামফ্রন্ট সরকারের ভূত দেখে না। এই ধরনের সরকারের দীর্ঘ অস্তিত্বকে তারা আর তাদের শ্রেণীস্বার্থের প্রতি বিপদ হিসাবে মনে করে না। বিপরীতে, গণআন্দোলনগুলির বিরুদ্ধে এই সরকারগুলিকে বেশি বেশি করে ব্যবহার করা যাচ্ছে। সুতরাং যারা এই সরকারগুলির মধ্যে এখনও বিপ্লবী প্রবণতা খোঁজেন, তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। অবশ্য এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক পরিণতি হিসাবে সংসদীয় সীমানার মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক উপরিকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবিতে এই সরকারগুলি সোচ্চার হয়েছে। এই রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় তার গণভিত্তিকে বাড়াতে পেরেছে এবং নতুন নতুন শক্তিকে, বিশেষ করে যুবকদের সমাবেশিত করতে সফল হয়েছে। সিপিআই-ও বাধ্য হয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে এবং কিছু আন্দোলন গড়ে তোলার পথে গেছে। তাই “রাজীব হঠাও” ইস্যুতে বাম দলগুলির রাজনৈতিক উদ্যোগের ফলে তাদের সাথে যৌথ কার্যকলাপের সম্ভাবনা বেড়েছে।
এখন আমাদের পার্টির বিবর্তনের প্রক্রিয়াটি বিচার করা যাক। মধ্যবর্তী এই পর্বে আমাদের পার্টির মধ্যে নয়া বাম ও নৈরাজ্যবাদী ধারণাগুলি মাথাচাড়া দেয়। এই ধারণাগুলি ধীরে ধীরে দেশের মাটি থেকে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের মূল ধারা থেকে আমাদের পার্টিকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। এই প্রক্রিয়ার পরিণতিতে খোদ পার্টিরই বিলোপ ঘটত। এমনকি আজও বিভিন্ন গ্রুপ এই সমস্ত ধারণা নিয়ে চলেছে এবং ফলস্বরূপ প্রান্তিক রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। কেউ অধঃপতিত হয়েছে পুঁথিবাগীশ গোষ্ঠীতে, কেউ জাতিসত্তা বা সংখ্যালঘুদের আন্দোলনকে আঁকড়ে ধরেছে, আবার কেউ কেউ কিছু দূরবর্তী এবং বিছিন্ন পাহাড়ে ও জঙ্গলে সশস্ত্র কার্যকলাপ পরিচালনা করার নামে নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাপার হল তারা এই পরিস্থিতিকে নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়েছেন। এক সর্বভারতীয় পরিপ্রেক্ষিত ছাড়া, চলমান দেশজোড়া রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ ছাড়া, নিছক স্থানীয় ও আংশিক সংগ্রামগুলির, তা সে যতই জঙ্গী হোক, কোনো তাৎপর্য কমিউনিস্টদের কাছে নেই। পনেরো বছরের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আমরা ছিন্নভিন্ন অবস্থা থেকে একটি কেন্দ্রীভূত ও ঐক্যবদ্ধ পার্টি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি, সংগ্রাম ও সংগঠনের ক্ষেত্রে একপেশে ধারণাকে অতিক্রম করে সংগ্রামের বিভিন্ন রূপের সমন্বয়ের চেষ্টা চালাচ্ছি, চেষ্টা চালাচ্ছি স্থানীয়তাবাদের সীমানাকে অতিক্রম করে দেশজোড়া রাজনৈতিক সংগ্রামে বিপ্লবী গণতন্ত্রের ধারা হিসাবে নিজেদের জোরালো আত্মঘোষণার জন্য। বিলোপের মুখ থেকে ফিরে এসে সিপিআই(এমএল) নতুন জীবন লাভ করেছে। এই পরিস্থিতি বিভিন্ন বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে আন্তঃক্রিয়া চালানোর সুযোগ বাড়িয়েছে, বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ও যৌথ কার্যকলাপ চালাতে শর্ত সৃষ্টি করেছে এবং তাদের গণভিত্তিকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে আমাদের প্রচারকে আরও বাস্তবসম্মত করেছে। সিপিআই, সিপিআই(এম) বা বামফ্রন্ট সরকারগুলিকে নিছক নাকচ করার মধ্যেই যা সন্তুষ্ট থাকে সেই পেটিবুর্জোয়া বিপ্লববাদে নিমগ্ন হওয়ার পরিবর্তে আমরা আমাদের সমালোচনাকে আরও নির্দিষ্ট করেছি। এর আগেও আমরা নীচ থেকে ব্যাপক বাম ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলেছিলাম, কিন্তু তা এগোতে পারেনি, কেননা তার জন্য দরকার ছিল ওপর থেকেও কিছু চুক্তি করা। কৌশলের এই বিকাশ নীচতলা থেকে বাম ঐক্য গড়ে তোলার কাজে কার্যকরী অগ্রগতি ঘটাতে পারে। বিপ্লবী সংকট গভীর হওয়ার সাথে সাথে ঐতিহাসিক নিয়ম হিসাবে ব্যাপক বামপন্থী জনগণ বিপ্লবী ধারার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং বিভিন্ন বাম দলগুলি বা তাদের বড় একটি অংশ সেই ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে যা পরোক্ষভাবে হলেও বিপ্লবী গণতন্ত্রের পক্ষে যাবে। যদি আমরা আজ থেকে বাম ঐক্যের জন্য শর্ত সৃষ্টি করতে আমাদের প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখি, তবে ভবিষ্যতে কনফেডারেশন গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিজেদের হাতে রাখতে সক্ষম হব।
আমাদের স্লোগান আমাদের শিক্ষা দেয় যে আমরা ভারতের বাম আন্দোলন থেকে আলাদা নয়, বরং বাম আন্দোলনের মধ্যকার বিপ্লবী ধারা। এই স্লোগান আমাদের জন্য বিরাট বিপ্লবী সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয় এবং এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার দাবি জানায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের শ্লোগানের কী প্রাসঙ্গিকতা আছে? আমরা দেখছি শাসক শ্রেণীর উভয় রাজনৈতিক সংগঠন কংগ্রেস ও ন্যাশন্যাল ফ্রন্ট বামেদের ব্যবহার করতে সচেষ্ট। কংগ্রেস যেখানে বাম শক্তিকে বিভক্ত করতে ও তাদের নিষ্ক্রিয় সহযোগীতে পরিণত করতে জাতীয় ঐক্য রক্ষা করা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা করার পুরোনো খেলা খেলছে, ভি পি সিং সেখানে “বামপন্থীরা আমার স্বাভাবিক মিত্র” ঘোষণা করে বামপন্থী শক্তিগুলিকে তাঁর পিছনে সামিল করতে চাইছেন। অতীতে ফ্যাসি-বিরোধী জোটের নামে কংগ্রেসের সহযোগী হয়ে সিপিআই মারাত্মক ভুল করেছিল এবং আজ যুক্তরাষ্ট্রীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্পের নামে ন্যাশন্যাল ফ্রন্টের শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া একই রকম মারাত্মক ভুল হবে। আজ প্রয়োজন বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করা এবং আমাদের স্বাধীন আত্মঘোষণার ভিত্তিতে ন্যাশন্যাল ফ্রন্টের মধ্যে মেরুকরণ ঘটানোর চেষ্টা চালানো। ন্যাশন্যাল ফ্রন্ট এক অস্থায়ী রাজনৈতিক মঞ্চ এবং তার শরিকদের মধ্যে জনতা পার্টি ও লোকদল গুরুতর অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়েছে। সুতরাং বাম শক্তিগুলির স্বাধীন উদ্যোগ এক শক্তিশালী বিরোধীপক্ষ হিসাবে তাদের উত্থান ঘটাবে। কনফেডারেশনের শ্লোগানের ভিত্তিতে এই প্রচারাভিযানকে আমরা বাম-ঘেঁষা জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে পারি।
সর্বোপরি, সিপিআই(এম)-এর থেকে স্বাধীনভাবে নিজেদের পরিচিতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার এবং এমনকি বামফ্রন্ট সরকারের জনবিরোধী পদক্ষেপগুলির বিরুদ্ধে সমালোচনা করার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বামফ্রন্ট শরিকদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সিপিআই বিভিন্ন রাজ্যে সিপিআই(এম)-এর থেকে আলাদাভাবে নিজেদের কর্মসূচি গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই সমস্ত শরিকরা সাধারণভাবে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও, আমাদের সঙ্গে আন্তঃক্রিয়া করতে এগিয়ে আসছে। এমনকি সিপিআই(এম)-এর মধ্যেও বিভিন্ন স্তরে আমাদের পক্ষে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রবণতা রয়েছে। কনফেডারেশনের স্লোগান এই সমস্ত প্রবণতাগুলিকে তীব্রতা দিতে বাধ্য।
সারসংক্ষেপ করলে বলা যায়, মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে, এক ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচার থেকেও এক বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের স্লোগান নিশ্চিতভাবেই যথাযথ। কিন্তু এই সমস্ত কার্যকলাপের নেতৃত্বের কেন্দ্র হিসাবে আমাদের পার্টি যদি কোনো কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে, যদি স্বাধীনভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার কাজে অবহেলা করা হয়, তাহলে আমরা এই লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। সুতরাং আজকের আওয়াজ হোক : পার্টিকে দুর্বল করার সমস্ত চক্রান্ত নির্মূল করুন, আমাদের স্বাধীন গণভিত্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলুন এবং এক বাম ও গণতান্ত্রিক কনফেডারেশন গড়ে তোলার সংগ্রামে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলুন।