(১৯৮২ ডিসেম্বর, তৃতীয় পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট থেকে, সংক্ষেপিত)
ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতি যেমন বিপ্লবী সংকটের জন্ম দিচ্ছে তেমনই তা সংসদীয় ও সাংবিধানিক সংকটের দ্বারাও চিহ্নিত। ভারতের সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্র কোনো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ফসল ছিল না, তাই এর মধ্যে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রাণশক্তিও কোনোদিনই দেখা যায়নি। তবে অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ সময়ে একে কিছুটা টিকিয়ে রাখা ও শাসক পার্টির স্বার্থে কাজে লাগানো হয়েছিল কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে পুরোপুরি উৎখাত করে দেওয়া হয়। আর আজ যখন ইন্দিরা স্বৈরতান্ত্রিক চক্র এইসব প্রতিষ্ঠানকে প্রহসনে পরিণত করেছে, এমনকি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের দিকে এগিয়ে চলেছে তখন বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরা আর বুর্জোয়া বিরোধী দলগুলি এ নিয়ে বিরাট হৈ চৈ লাগিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন ভারতীয় জনগণের সমগ্র গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দিশা হওয়া উচিত বুর্জোয়া সংবিধান ও বুর্জোয়া পার্লামেন্টের পবিত্রতা রক্ষা। হরেক রকম বিকল্প ফেরী করা হচ্ছে, প্রত্যেকেই দাবি করছে যে সংবিধান ও সংসদের এই পবিত্রতা রক্ষা করতে একমাত্র সেই সক্ষম। সিপিআই(এম) সংশোধনবাদীরাও তাদের পরিচালিত সরকারের ভিত্তিতে জাতীয় বিকল্পের এক মডেল হাজির করেছে এবং এর নাম দিয়েছে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। এ বছর তাদের বিজয়ওয়াড়া কংগ্রেসে তাঁরা ঘোষণা করেছেন – “বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলা ও বাস্তবায়িত করা এমন এক পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে, যেখানে অন্যান্যরা সিপিআই(এম) বা শ্রমিকশ্রেণী কাউকেই নেতা হিসাবে মেনে নেননি – তাদের কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও সমান অংশীদার হিসেবেই মেনে নিয়েছেন। এই সমস্ত শক্তিগুলির মধ্যে ঐক্য বাড়ার সাথে সাথে এবং সামনে রাখা কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংগ্রামের সাথে সাথে শ্রমিকশ্রেণীর গুরুত্ব ও প্রভাব নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। কিন্তু শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্ব বহু দূরের বস্তুই থেকে যাবে এবং তা শক্তিগুলির আন্তঃসম্পর্কের এক সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থাতেই অর্জন করা যাবে।” একথা থেকে এটা পরিষ্কার বেরিয়ে আসছে যে সিপিআই(এম) শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে জনগণতন্ত্রের কর্মসূচি পুরোপুরি ত্যাগ করেছে এবং যা তার কাছে ‘বহু দূরের লক্ষ্যবস্তু’। ‘বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’-এর উত্তরণশীল পর্যায়ের নামে এই পার্টি যার ওকালতি করেছে তা হল বুর্জোয়া সংবিধান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের ‘বিশুদ্ধতা’ ও পবিত্রতা রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্যে তারা বিরোধী দলগুলির সাথে মিলে সরকার গড়তে চায় নেতৃত্বকারী শক্তি হিসাবে নয় বরং সমপর্যায়ের বা অন্তত গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসাবে।
জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলির – তা সে যতই ক্ষুদ্র বা আনুষ্ঠানিক হোক না কেন – ওপর স্বৈরতান্ত্রিক শক্তির যে কোনো আক্রমণের বিরোধিতা আমরা সর্বদাই করব নিশ্চয়। কিন্তু জনগণতন্ত্রের দিকে যে কোনো উত্তরণকালকে উত্তরণ বলে অভিহিত করা যায় শুধু তখনই, যখন তা জনগণকে সংসদীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে মোহমুক্ত হতে সাহায্য করে। এমনকি কমিউনিস্টরাও যখন বুর্জোয়া পার্লামেন্টে অংশ নেয় তখন তার উদ্দেশ্য থাকে ভেতর থেকে একে ভাঙ্গা – একে রক্ষা করা বা শক্তিশালী করা নয়। তাই একথা পরিষ্কার যে সিপিআই(এম)-এর উত্তরণকাল হল সংসদীয় গণতন্ত্রে ডুব দিয়ে জনগণতন্ত্রকে বর্জন করার দিকে উত্তরণ। আর ছোটোখাটো পার্থক্য বাদ দিলে, এই সূত্রায়নে সিপিআই(এম) ও সিপিআই একই জায়গায় আছে, ফলে বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের মাধ্যমে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ও জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পর্কে দুটি পার্টির ধারণা এক হয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে অন্যান্য বিষয়ে সিপিআই(এম) ইতিমধ্যেই পিছু হঠতে হঠতে সিপিআই-এর লাইনে পৌঁছে গেছে; বাম ও গণতান্ত্রিক মোর্চা উভয়ের মধ্যেকার প্রধান প্রধান রণকৌশলগত ফারাকগুলিকেও দূর করে দিয়েছে। তাই ডাঙ্গের বহিষ্কারের পরে দুটি পার্টি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি এসে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের দৃঢ়তার সাথে জনগণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। এবং এই লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য উপযুক্ত রূপ ও পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। আজ যখন অ-পার্টি শক্তিগুলির অনেকেই সামনে এগিয়ে আসছেন এবং গণতন্ত্রের জন্য ব্যাপক আকাঙ্খা ও সংগ্রাম দেখা যাচ্ছে ও এমনকি বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরাও তাতে অংশ নিচ্ছেন তখন সর্বহারা পার্টির কর্তব্য হল এমন রূপে, এমন স্লোগান দিয়ে তার নিজের ‘জাতীয় বিকল্প’র পতাকা তুলে ধরা যা ব্যাপকতম গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে। এরকম একটি মোর্চা অবশ্যই মূলত সংসদ-বহির্ভূত হবে; নিজের বিস্তার, সংহতি সাধন ও বিজয়ের জন্য জনগণের সংগ্রামের ওপর নির্ভর করবে এবং কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সামাজিক শক্তিগুলিকেই অর্থাৎ শ্রমিকশ্রেণী, কৃষক শ্রেণীগুলি, বুদ্ধিজীবী ও বুর্জোয়াদের প্রগতিশীল অংশকেই অন্তর্ভুক্ত করবে। এই মোর্চা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বিরোধী বুর্জোয়া পার্টিগুলি ও গণসংগঠনগুলির সঙ্গেও সমঝোতা করবে, তবে তাদের সঙ্গে একই কর্মসূচিভিত্তিক কোনো ফ্রন্টে যাবে না। এইসব পার্টির কিছু কিছু ব্যক্তির সঙ্গে এবং এরকম কোনো কোনো পার্টির সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামের কিছু কিছু বিশেষ ইস্যুতেও এই ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে। বিপ্লবী মার্কসবাদী-লেনিনবাদীরা এবং অন্যান্য বিপ্লবী পার্টি ও সংগঠন, গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলি ও গণতান্ত্রিক-দেশপ্রেমিক ব্যক্তিরাও এই মোর্চায় থাকবেন। প্রবাসী ভারতীয় জনগণের মধ্যেকার গণতান্ত্রিক-দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের এবং সংগঠনগুলিকেও অবশ্যই এই মোর্চায় রাখতে হবে। বর্ণ বৈষম্য ও অন্যান্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রামকে এই মোর্চা সমর্থন করবে এবং তাদের মাধ্যমে ভারতীয় জনগণের ওপর প্রতিটি দমন-পীড়ন ও অগণতান্ত্রিক আইন সম্পর্কে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাবে।
এই মোর্চাকে অবশ্যই শাসকশ্রেণীগুলির মধ্যেকার বিভিন্ন দ্বন্দ্বকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে শিখতে হবে এবং সমস্ত ধরনের বুর্জোয়া ও সংশোধনবাদী সমন্বয়গুলির বিপরীতে নিজেকে বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে হবে। আর মোর্চার ভেতরে সর্বহারা পার্টিকে বুর্জোয়া উদারনৈতিক প্রবণতার বিরুদ্ধে অবিচলভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, যেমন – মোর্চাকে অ-রাজনৈতিক বা গতানুগতিক বা সংসদীয় অথবা সামাজিক সংস্কারের মোর্চায় পরিণত করার প্রবণতা, শাসকশ্রেণীর কোনো অংশের সাথে অনীতিনিষ্ঠ আপোশ করার প্রবণতা ইত্যাদি। জঙ্গী গণসংগ্রাম ও ক্ষমতা দখলের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এই মোর্চাকে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ দেওয়ার কাজও পার্টিকেই করতে হবে।
শুরুতে আমাদের ধারণা ছিল এই যে শ্রমিক, কৃষক ও পেটি বুর্জোয়া ছাড়া অন্যদেরও নিয়ে মোর্চা গড়ে উঠবে অন্তত কয়েকটি জায়গায় লাল রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেই। লাল রাজনৈতিক ক্ষমতার এলাকাগুলিই হল শ্রমিক-কৃষক ঐক্যের নির্দিষ্ট প্রকাশ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ব্যাপারটা দাঁড়াল অন্যরকম। লাল রাজনৈতিক ক্ষমতার এলাকা আমরা গড়ে তুলতে বা ধরে রাখতে পারিনি, কিন্তু সর্বাহারা পার্টি ১৫ বছর ধরে এই লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে গেছে। আর আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ঐ একই গণতান্ত্রিক লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দুটি প্রবণতা, দুটি বাস্তব ঘটনা সামনে এসে গেছে। একদিকে, বিহারের কিছু কিছু অঞ্চলে এবং সম্ভবত অন্ধ্রেও রয়েছে কমবেশি স্থায়ী কৃষকদের প্রতিরোধ সংগ্রামের এলাকাগুলি – যেখানে শ্রেণীশত্রুদের ওপর লাল সন্ত্রাস কায়েম করা হয়েছে, অতীতেও এরকম অনেক এলাকা গড়ে উঠেছিল যা পরে ধ্বংস হয়ে গেছে বা ধাক্কা খেয়েছে এবং বর্তমানে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় আছে। অপরদিকে রয়েছে ব্যাপক ভারতীয় জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলির এক প্রবণতা – যে সব আন্দোলন জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে, এমনকি জাতীয় চরিত্রও অর্জন করছে। ১৯ জানুয়ারির ধর্মঘট বা এমনকি বিহার প্রেস বিলের কথা ধরা যাক! এটি কি এক সর্বভারতীয় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়নি? কেবল সাংবাদিকরাই নন, জনগণের অন্য সমস্ত অংশও এই বিলের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন। কারণ, তাঁরা এটা অনুভব করতে পারছেন যে এই বিল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনেছে। আজ সংবাদপত্রের সেন্সর ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, কাল কাউকেই কথা বলতে দেওয়া হবে না। আর এইভাবে দেখা দিয়েছে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এই প্রবণতা। এখন, এইসব আন্দোলনকে পথভ্রষ্ট করার জন্য বিরোধী দলগুলি, সংশোধনবাদীরা ও স্বার্থপর লোকজনেরা চেষ্টা চালাবে। আর ঠিক এই কারণেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বহারাশ্রেণীকে। ১৫ বছর ধরে সর্বহারা শ্রেণী কৃষকদের সঙ্গে থেকেছেন তাঁদের সংগঠিত করেছেন, ব্যাপ্তিতে ও মাত্রায় অভূতপূর্ব বিপ্লবী সংগ্রামে তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আজও তাঁরা প্রতিরোধ সংগ্রামের এলাকাগুলি ধরে রেখেছেন। অতএব উপরোক্ত দুটি প্রবণতাকে একত্রে মেলাতেই হবে। প্রতিরোধ সংগ্রামের এলাকাগুলির ভিত্তিতে একটি সর্বভারতীয় গণফ্রন্ট গড়ে তুলতেই হবে।
কেন এই মোর্চাকে প্রতিরোধ সংগ্রামের এলাকাগুলির ওপর ভিত্তি করতে হবে? কারণ এই এলাকাগুলি কেবল আমূল পরিবর্তনের (radical) কৃষি কর্মসূচির ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে আর আমূল পরিবর্তনের কৃষি কর্মসূচি ছাড়া কোনো সর্বহারা নেতৃত্বও গড়ে উঠতে পারে না। শুধু তাই নয়, এই এলাকাগুলি যুক্তমোর্চার কাজের মডেলও হয়ে উঠবে।
কেউ কেউ বলছেন, মধ্যবর্তী শক্তি ব্যাপারটি কী? আমাদের বক্তব্য হল, মধ্যবর্তী শক্তি হলেন তাঁরা, যাঁরা আমাদের আর শত্রুদের মাঝামাঝি অবস্থানে আছেন। শ্রমিকশ্রেণীর পেটি বুর্জোয়া নেতা, জাতিসত্তার নেতা, নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত ব্যক্তি, বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী, হয়তো কিছু কিছু ধর্মীয় ও নিপীড়িত জাতের নেতা ইত্যাদি যাঁরা বিভিন্ন রূপে ও মঞ্চে সংগঠিত আছেন। তাঁরা যে দোদুল্যমানতা দেখাবেন তা খুবই স্বাভাবিক; কখনও হয়তো তাঁরা আমাদের কাছে আসবেন, আবার অন্যসময়ে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে টেলিগ্রাম পাঠাবেন। কিন্তু এজন্য কি আমরা দায়ী? আমরা আগেই বলেছি যে তাঁরা মধ্যবর্তী অবস্থানে আছেন। তাঁদের রয়েছে অ-পার্টি ধ্যানধারণা। অ-পার্টি ধারণা কী? লেনিনের কথায়, তা হল সমাজতন্ত্রবিরোধী বুর্জোয়া ধারণা। কমিউনিস্টদের এ ধারণার বিরোধিতা করতেই হবে। কিন্তু এ সত্ত্বেও অ-পার্টি সংগঠনগুলি রয়েই যাচ্ছে, আর সত্যি কথা বলতে কী, গোটা গণতান্ত্রিক বিপ্লবই বহিরঙ্গের দিক থেকে এক অ-পার্টি রূপ – এক মোর্চার রূপ বহন করে। কিন্তু এর মধ্যে চলতে থাকবে সর্বহারা ধারণা ও বুর্জোয়া ধারণার মধ্যে সংগ্রাম, ভেতরে ও বাইরে পার্টিগুলির মধ্যেকার সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই নির্ধারিত হবে পুরো ব্যাপারটির মর্মবস্তু। পার্টিকে স্বাধীনভাবে তার সংগ্রামের এলাকাগুলি ধরে রাখতে হবে আবার এই মোর্চার ভেতরেও কাজ করতে হবে।
এখন, এটা ঠিকই যে এই মোর্চা প্রতিরোধ সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করে আছে এবং এর বিস্তার ও বিকাশ সশস্ত্র সংগ্রাম ও ঘাঁটি এলাকা গঠনের বিকাশ ঘটানোয় সহায়ক হবে। কিন্তু কীভাবে এই মোর্চা এগিয়ে যাবে, কোন রূপে এর বিকাশ ঘটবে? এর নিজের বিকাশের নিয়মগুলি কী? এই প্রশ্নে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে আছি। শুরুতে আমরা কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের কিছু কিছু অংশ ও ভারতের অনেকগুলি জায়গা থেকে মধ্যবর্তী শক্তিদের নিয়ে একটি মোর্টা গড়ে তুলেছি। একটা ছোটো পার্টির পক্ষে এ এক বিরাট সফলতা। সিপিআই(এম)-এর রাজ্যে রাজ্যে সরকার গড়ে তোলার শ্লোগানের বিপরীতে এই মোর্চাকে এগিয়ে আসতে হবে জনগণের সরকার গড়ার স্লোগান নিয়ে – প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের স্লোগান নিয়ে। এমন সময় আসতে পারে যখন জনপ্রিয় প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংবিধানসভা আহ্বান করার জন্য অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের স্লোগানও এই মোর্চাকে তুলতে হতে পারে। অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের প্রশ্ন অভ্যুত্থানের প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে। ওপর থেকে অভ্যুত্থান সংগঠিত করার মধ্যে দিয়ে পার্টি ওপর আর নীচ – দুদিক থেকেই শ্রেণীসংগ্রামকে মেলানোর পরিকল্পনা করে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই এসে পড়ে সংসদীয় নির্বাচনকে কাজে লাগানোর প্রশ্ন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের বিষয়কে অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলা যায় – তখন সরকারের ওপরেই নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সময় যখন সংবিধানসভা ও অস্থায়ী বিপ্পবী সরকারের স্লোগানগুলি দীর্ঘদিনের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই তখন নির্বাচনকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা যেতে পারে। আর সম্ভাবনা যদি অন্যরকম হয় তাহলে এটা করা ঠিক হবে না।