যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মাওবাদ/নকশালবাদ/বামপন্থী উগ্রপন্থাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে একক বৃহত্তম শত্রু হিসাবে বর্ণনা করে সে তো চারু মজুমদারকে অমঙ্গলের প্রতিমূর্তি বলে চিহ্নিত করবেই। বিপ্লবের বিরুদ্ধাচারী শ্রেণীশক্তিগুলির বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধিরা একটা উদ্দেশ্য নিয়েই সি এম-কে হত্যার রাজনীতির উদ্গাতা ও তত্ত্বকার হিসাবে চিত্রিত করে। তারা যে কেবল বিদ্যমান বিভিন্ন সংগঠনগুলিকেই আক্রমণ করে তা নয় বরং তারা সেই মানুষটিকে কলঙ্কিত করার ও শেষ করে দেওয়ার সমস্ত সুযোগকেই কাজে লাগায় – যে মানুষটিকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে অথচ যার ভূত আজও এখানে সেখানে, সর্বত্র তাড়া করে বেড়ায়।
প্রায়শই সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে ওপর ওপর ধারণা থাকার কারণে কিম্বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের নিজেদেরই বিপ্লব সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত, পরস্পর বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গী থাকায় বামেদের মধ্যেও অনেকে তাঁকে সন্ত্রাসবাদী/নৈরাজ্যবাদী/বাম হঠকারী বলে বর্ণনা করে থাকেন। জনগণের চলমান বিভিন্ন আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক লেখককেও অত্যন্ত কর্কশ মন্তব্য করে তাঁকে খারিজ করতে সচেষ্ট হতে দেখা যায়। উদারহণস্বরূপ, বামপন্থী ঐতিহাসিক দিলীপ সাইমন তাঁকে “একজন ব্যক্তি যাঁর সমাজতন্ত্রের প্রতি একমাত্র অবদান হল মানুষ খুনের মনোবিকারকে রাজনৈতিক নীতির পর্যায়ে উন্নীত করা” বলে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁকে ভি ডি সাভারকারের মতো সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের পংক্তিতে স্থান দিয়েছেন (“পার্মানেন্ট স্প্রিং”, সেমিনার, মার্চ ২০১০)। মাওবাদীদের অনুসৃত পদ্ধ তির মস্ত গুণগ্রাহী লেখিকা অরুন্ধতী রায়ের মতে সি এম-এর “জ্বালা ধরানো বাক্যালংকারগুলি হিংসা, রক্তপাত ও শহীদ হওয়ার স্তবগান করে এবং কখনও কখনও সেই ভাষা প্রায় গণহত্যাকে উৎসাহিত করার মতো কদর্ষ।” যদিও রায় আমাদের বলেছেন, “তাকে এতখানি কর্কশ হিসাবে আমরা বিচার করতে পারি না” – শুধুমাত্র এই কারণেই, যে পার্টিটির তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সেটি “ভারতের বিপ্লবের স্বপ্নকে সত্যিকার এবং জাগরুক করে রেখেছে [“কমরেডদের সঙ্গে চলতে চলতে” (ওয়াকিং উইথ দি কমরেডস), আউটলুক, মার্চ ২৯, ২০১০]।