(লিবারেশন, জানুয়ারি ১৯৯৮ থেকে)
প্রত্যাশিত সময়কালের আগেই যুক্তফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে প্রথম পর্বের সহযোগিতার আকস্মিক ইতি ঘটেছে। রাষ্ট্রপতি উত্তেজনা প্রশমনের সময় দিলেও যুক্তফ্রন্ট-কংগ্রেস যেমন সে পথে যেতে পারেনি, তেমনি আবার টিকতে পারে এমন অন্য কোনো শাসনব্যবস্থাও সামনে আসতে পারেনি। ফলে দুবছরের মধ্যেই দেশকে আবার এক সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
কংগ্রেসের ব্ল্যাকমেলের কাছে নতিস্বীকার করতে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করার জন্য যুক্তফ্রন্টকে অভিনন্দন; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই সাহসিক কাজই যুক্তফ্রন্টের শেষ ঐক্যবদ্ধ কাজ হয়ে দেখা দিতে পারে। যুক্তফ্রন্টের মধ্যে কিছু অংশ আগে থেকেই কংগ্রেসী লাইন অনুসরণে আগ্রহী ছিল, আর নির্বাচন এসে পড়ায় তারা কিছু রাজ্যে বিশেষ পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে খোলাখুলি বা গোপন সমঝোতার পরিকল্পনা করছে। একই বিচার-বিবেচনা থেকে উড়িষ্যার জনতা দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিজেপিকে বরণ করে নিয়েছে। যিনি মন্ত্রীসভা থেকে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মন্ত্রীদের বহিষ্কারের যুক্তফ্রন্টের নির্দেশকে মানতে অস্বীকার করেছিলেন, সেই যুক্তফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী গুজরালও লোকসভায় প্রবেশের জন্য আকালি দলের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন। এছাড়াও, অত্যন্ত সুসময়ে জেল থেকে মুক্তির পর লালু যাদবও সাধারণভাবে যুক্তফ্রন্টের কাছে এবং বিশেষভাবে জনতা দলের কাছে অত্যন্ত মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাদের এক সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি ও সাধারণ আবেদন থাকা সত্ত্বেও নেতৃত্ববিহীন ও দিশাহীন যুক্তফ্রন্ট বিভাজিত শক্তি হিসাবেই দেখা দিচ্ছে। কাজেই, নির্বাচনে এক সঙ্ঘবদ্ধ রাজনৈতিক জোট হিসাবে সাধারণ মানুষের মনে আলোড়ন তোলা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
জৈন কমিশনের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও, ঐ রিপোর্টের একমাত্র তাৎপর্য হল কংগ্রেস নামক পরিবারটিকে তুলে ধরা এবং তাকে কেন্দ্র করে পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং এইভাবে যুক্তফ্রন্ট থেকে তাদের বিচ্ছিন্নতাকে যৌক্তিক করে তোলা।
আমাদের পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেস যেমন উল্লেখ করেছে, “... একটা জোট যাতে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয় বড় জাতীয় দলই নেই, সংসদে যাদের মিলিত আসন সংখ্যা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, এমন জোট নিয়ম না হয়ে কেবল ব্যতিক্রমই হতে পারে। শীঘ্রই হোক বা দেরীতে, এই দুই বড় দলের যে কোনো একটি সরকার চালাবার জন্য তাদের পিছনে যথেষ্ট সমর্থন সমাবেশিত করবে।”
যুক্তফ্রন্ট ও কংগ্রেস উভয়েরই মিলিতভাবে শাসক ও বিরোধীপক্ষ হিসাবে কাজ করার ভি পি সিং-এর সূত্রায়ন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পার্টি কংগ্রেসের রিপোর্ট উল্লেখ করেছে, “এই যুক্তির মূলগত অসঙ্গতি হল এই যে, তা সংঘাতের লাগাতার প্রক্রিয়া এবং তার ফলে ব্যাপক বিজেপি-বিরোধী পক্ষ গঠনকারী বিভিন্ন দলগুলির মধ্যে শক্তির আপেক্ষিক পরিবর্তনের বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করে। এবং তা ধরে নেয় যে কেন্দ্রে কংগ্রেসের জন্য স্থায়ীভাবে এক গৌণ ভূমিকাই নির্দিষ্ট। কংগ্রেস এখনও প্রধান জাতীয় দলগুলির অন্যতম এবং সে তার বর্তমান অদৃষ্ট নিয়ে কখনই সন্তুষ্ট থাকবে না। সিপিআই(এম) এবং বিজেপি উভয়ের প্রতি বিরোধিতার কর্মসূচিকে সুস্পষ্ট করার মাধ্যমে তার পরিকল্পনা হল মধ্যপন্থী শিবিরে তার প্রভাব খাটিয়ে যুক্তফ্রন্টকেই বানচাল করে দেওয়া।”
রিপোর্টে আরও মন্তব্য করা হয়েছে, “বর্তমানে যুক্তফ্রন্ট সরকার কোনোরকম পরিকল্পনামাফিক পরিচালনার বদলে তালেগোলে চলছে এবং কংগ্রেস ক্ষমতায় আরোহণের জন্য পরবর্তী সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।”
এই কংগ্রেসী কৌশল, যা আপাতভাবে ১৯৭৯-এ চরণ সিং সরকার এবং ১৯৯০-এ চন্দ্রশেখর সরকারের সাপেক্ষে প্রয়োগ করা কৌশলের অভিন্ন রূপ, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ফলাফল দিতে পারে। এটা কংগ্রেসের পতনের পর্যায় এবং কংগ্রেস খুব বেশি হলে মধ্যপন্থী শিবিরের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রাখতে পারে যেখানে সে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালন করতে পারবে। এই লক্ষ্য অর্জনে কংগ্রেস বিভিন্ন কৌশলের খেলা খেলবে।
পার্টি কংগ্রেসের রিপোর্টে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে, “সে (কংগ্রেস) যুক্তফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বগুলিকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য মিত্র যোগাড় করতে চায়। বাম, মধ্যপন্থী ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলির তথাকথিত তৃতীয় শিবিরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ও ভাঙ্গন ধরানো এবং এক কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন ঘটানোর মতো যথেষ্ট কূটকৌশলের ক্ষমতা এখনও তার রয়েছে।”
রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে দেখানো হয়েছে, “ইতিমধ্যেই কংগ্রেস রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সাথে এক সমঝোতা গড়ে তুলেছে, মুলায়মের সাথে সম্পর্কের বিকাশ ঘটাচ্ছে এবং টিএমসি ও ডিএমকে-কে তার দিকে আনার জন্য একনিষ্ঠভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট প্রথমদিকে যে প্রচার চালিয়েছিল, কংগ্রেস যুক্তফ্রন্টকে সেই সমালোচনার সুর নরম করতে বাধ্য করে এবং এইভাবে সে আশা করে যে তার ভাবমূর্তিকে পুনরায় উজ্জ্বল করে তুলতে পারবে, তার দিক থেকে সরে যাওয়া মুসলিমদের পুনরায় জয় করে নিতে পারবে এবং আগামী নির্বাচনে এক বিজেপি-বিরোধী মোর্চার নেতৃত্বে উঠে আসতে পারবে।”
বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়েরই ওজনদার রাজনৈতিক বিকল্প হিসাবে, জোটবদ্ধতার মডেল হিসাবে, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় মোর্চা হিসাবে এবং এমনকি জনগণতান্ত্রিক মোর্চার অগ্রদূত হিসাবে যুক্তফ্রন্টকে ব্যাখ্যা করার সমগ্র প্রয়াসটি স্পষ্টতই ছিল ভিত্তিহীন। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে কংগ্রেসের বিকল্প অদ্ভুতভাবে কিন্তু প্রকৃত অর্থেই যুক্তফ্রন্ট-কংগ্রেসের মধ্যে সহযোগিতার রূপে আবির্ভূত হয়। কারণ হিসাবে বলা হয়, একক বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হয়ে বিজেপি ক্ষমতার কাছাকাছি চলে এসেছে। ঐ রাজনৈতিক যুক্তি তো এখনও খাটে। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন যুক্তফ্রন্ট-কংগ্রেসের মধ্যকার সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসে এক গুরুত্বপূর্ণ রূপকার হয়ে দেখা দেবে। এই প্রক্রিয়ায় উভয় সংগঠনই অবশ্যম্ভাবীভাবেই দলত্যাগ, ভাঙ্গন ও নতুন সামাজিক সমীকরণের রূপে গুরুতর অভ্যন্তরীণ আলোড়নের মধ্য দিয়ে যাবে, কিন্তু তা যুক্তফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে মাত্র।
বর্তমান টালমাটাল অবস্থা থেকে অবশ্য সব থেকে বেশি লাভবান হচ্ছে বিজেপি। তার ওপর থেকে ‘অস্পৃশ্যতার’ ছাপ মুছে ফেলতে সে সক্ষম হয়েছে এবং নতুন নতুন মিত্রকে তার দিকে সামিল করছে। এই প্রক্রিয়ায় অবশ্য ‘মূল্যবোধের রাজনীতির’ মতো অতিরঞ্জিত দাবিকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। কংগ্রেসী উত্তরাধিকারকে কব্জা করার লক্ষ্যে সে দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতির শিরোমণিদের পোষণ করার কুখ্যাত কংগ্রেসী সংস্কৃতিকেও আত্মসাৎ করছে।
শিল্প ও বাণিজ্য মহলের পছন্দের তালিকায় সেই এখন এক নম্বর এবং বেনারস কংগ্রেসের রিপোর্টে যেমন দেখানো হয়েছে, “আগামী নির্বাচনের আগে না হলেও, ঐ নির্বাচনের পরে শাসন ক্ষমতায় বিজেপির আরোহণকে স্বাগত জানাতে ভারতীয় শাসক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি প্রস্তুত।”
বিজেপি জানে যে এর চেয়ে ভালো সুযোগ সে আর পাবে না, আর তাই ‘হয় এখন, নতুবা কখনও নয়’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সে মরিয়া গতিতে দিল্লী দখলে উদ্যত হয়েছে। বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং স্থায়িত্বের প্রতি প্রবল ঝোঁক এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিজেপি কর্তৃক উত্তরপ্রদেশের দুর্গ দখল এবং রণবীর সেনার মতো দুর্বৃত্ত চক্রকে মদত দিয়ে বিহারে সুবিধাজনক অবস্থায় চলে আসা – এ সমস্ত কিছুই বিজেপি-বিপদকে সমাসন্ন করে তুলেছে এবং বাম ও প্রগতিশীল শক্তিগুলি কেবলমাত্র নিজেদের বিপদগ্রস্ত করে তোলার ঝুঁকির বিনিময়েই এই বিপদকে উপেক্ষা করতে পারে।
বেনারস কংগ্রেস বলছে, “গৈরিক শক্তি কর্তৃক ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখল করে নেওয়ার বিপদকে আমরা অবশ্যই স্বীকার করি। যুক্তফ্রন্টের ব্যর্থতা ঐ পরিণতির অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে। নিজের দিক থেকে বিজেপির যদিও নিজস্ব সমস্যা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অংশে তার বিস্তৃতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও এই বিপদের যথেষ্ট বাস্তব ভিত্তি রয়েছে এবং আমাদের একে খাটো করে দেখা উচিত নয়। আর তা যদি সত্যিই ঘটে, তবে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ওপর দাঁড়িয়ে কর্মনীতির পুনর্বিন্যাস ঘটাতে হবে”।
১৯৯৫-এর বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সময় সমতা পার্টির সঙ্গে সাময়িক আঁতাতের বিষয়টি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে পার্টি কংগ্রেস রিপোর্ট দেখিয়েছে, “ব্যবহারিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদ্বন্দ্বীকে দুর্বল করার লক্ষ্যে পরিচালিত কৌশলগত আঁতাত প্রায়শই খুবই ক্ষণস্থায়ী হয়ে দেখা দিতে পারে। এই বিষয়টিকে যদি খেয়াল না করা হয়, তবে পার্টির রাজনৈতিক কলাকৌশলের এবং পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কৌশলগত ক্ষেত্রে নমনীয়তা গ্রহণের সামর্থ্য যথেষ্ট খর্ব হয়ে পড়বে”।
এই বিষয়টি আসন্ন নির্বাচনে সাধারণভাবে বামেদের এবং বিশেষভাবে আমাদের পার্টির কৌশলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করাচ্ছে।
প্রথমত, স্থায়িত্বের তথাকথিত স্লোগানটি একটি ধাপ্পা এবং তা স্থিতাবস্থার শক্তিগুলির জন্যই নির্দিষ্ট। ইন্দিরা গান্ধীর স্থায়িত্ব অত্যধিক কেন্দ্রিকতা ও জরুরি অবস্থায় পরিণতি লাভ করেছিল। নরসিমা রাও-এর স্থায়িত্ব ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা দুর্নীতিপরায়ন শাসক জমানার জন্ম দিয়েছে। আর বিজেপির স্থায়িত্ব ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে ধ্বংস করে কেবলমাত্র রামমন্দিরকেই বাস্তবায়িত করবে এবং রণবীর সেনার মতো দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীকে সাহস যোগাবে। যুক্তফ্রন্ট-কংগ্রেস ধরনের সহযোগিতার ভিত্তিতে ঢিলেঢালা ও অস্থায়ী প্রকৃতির সরকারই ভারতবর্ষে বাম আন্দোলনের অগ্রগতির পক্ষে সর্বাপেক্ষা অনুকূল। এখানে যুক্তফ্রন্টকে ব্যাপকতর সাধারণ প্রেক্ষিতে বুঝতে হবে যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল সমস্ত ধরনের মধ্যপন্থী শক্তিগুলি, এমনকি সেই শক্তিগুলিও যেগুলিকে লালু যাদব তাঁর তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রন্টে সমবেত করেছেন।
দ্বিতীয়ত, এটি সঙ্গতভাবেই বামেদের এক স্বাধীন স্বতন্ত্র সংহতি দাবি করে যা জনগণের স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে যতটা সম্ভব সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ঐ সরকারের ওপর চাপ বজায় রাখতে অধিকতর সুবিধাজনক অবস্থায় নিজেদের পেতে পারে। বুর্জোয়া সরকারে অংশগ্রহণের জন্য লালায়িত হওয়া এবং জ্যোতি বসুর মতো ব্যক্তি বিশেষের জন্য – যে জ্যোতি বসু বুর্জোয়া জগতের কাছে বেঠিক পার্টিতে সঠিক লোক – প্রধানমন্ত্রীত্ব প্রার্থনা করার পরিবর্তে বামেদের উচিত কেন্দ্রে এক গণতান্ত্রিক বিরোধীপক্ষের ভূমিকা পালনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা।
সরকারি বাম নেতৃত্বের ভাবনা কিন্তু অন্যরকম। এ বি বর্ধন বারবারই এই বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছেন যে, জ্যোতি বসু অনেক ভালো প্রধানমন্ত্রী হতেন এবং তাঁর নেতৃত্বাধীনে যুক্তফ্রন্ট-কংগ্রেস সহযোগিতা মুখ থুবড়ে পড়তো না। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হত, তা ঈশ্বরই জানেন! এই সেদিন সুরজিৎ কংগ্রেসকে তার চাপ প্রয়োগের কৌশলের জন্য ভর্ৎসনা করতে গিয়ে এই বলে নিজেদের বাহবা দিয়েছেন যে, অনেক বিষয়েই বামেদের আপত্তি থাকলেও, তারা কিন্তু কোনো বিষয়েই চাপাচাপি করেনি। কী নির্লজ্জ দাবি! চিদাম্বরমের ‘স্বপ্নের বাজেট’ হোক, কৃষি শ্রমিক বিল ও নারী সংরক্ষণ বিল নিয়ে গড়িমসি করাই হোক, বামেরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেনি। বিভিন্ন ইস্যুতে জনগণের গণতান্ত্রিক সমাবেশ ঘটানোর পরিবর্তে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব পুরোপুরি ‘সংখ্যাগত খেলা’ ও ‘কংগ্রেসকে প্রশমিত করার’ মধ্যেই ডুবে থেকেছে। বিজেপিকে বাধাহীনভাবে অনায়াসে জায়গা করে দেওয়ার ব্যাপারে তাদের ভূমিকার জন্য সমাজগণতন্ত্রীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে যখন প্রতিটি রাজনৈতিক কার্যকলাপই তাৎপর্যপূর্ণ, তখন তারা বিহার বিধান পরিষদের নির্বাচনে রাবড়ি দেবীর বিরুদ্ধে এক সাধারণ প্রার্থী খাড়া করে বিজেপির সঙ্গেই ভোট দিতে দ্বিধা করেনি – এবং তা করেছে ১৭ পার্টি জোটের সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ অবমাননা করেই।
সিপিআই(এম) নেতৃত্ব ভবিষ্যতে সরকারে অংশগ্রহণের জন্য পার্টিকে প্রস্তুত করছে আর জ্যোতি বসু তল্পিতল্পা নিয়ে দিল্লী যাওয়ার জন্য আবারও পা বাড়িয়ে আছেন। কাজেই বামেদের কৌশল সম্পর্কিত বিতর্কটিকে তীব্রতর করে তুলতে হবে এবং এই ব্যাপারে আমরা সিপিআই(এম) নেতৃত্বের একটি অংশের সমর্থন প্রত্যাশা করতে পারি।
আগামী নির্বাচনে আমাদের সমগ্র শক্তিকে সক্রিয় করে তুলতে হবে এবং সারা ভারতব্যাপী এক স্বাধীন নির্বাচনী প্রচারাভিযান পরিচালনা করে জনগণের ব্যাপক অংশের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমাদের পরিচিতির প্রতীক স্বরূপ আন্দোলনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতেই আমাদের অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এরপর, বিহার এবং আসামের মতো রাজ্যগুলিতে আমাদের জোটের শরিকদের সঙ্গে যতদূর সম্ভব এক রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও আসন ভাগাভাগিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে এবং সবশেষে, ব্যাপক সংখ্যক আসনে যেখানে আমরা বা আমাদের কোনো জোট শরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না, বা যেখানে আমাদের কোনো জোট-শরিক বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনকে সমর্থন করব এবং যেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র ওজনদার প্রতিদ্বন্দ্বী হল কংগ্রেস প্রার্থী, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা ভোটদানে বিরত থাকব।
ধর্মনিরেক্ষতা, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার পক্ষে এগিয়ে আসুন!
বুর্জোয়া সরকারে অংশগ্রহণের বিপক্ষে – এক বাম বিরোধীপক্ষের সপক্ষে এগিয়ে আসুন!
গৈরিক বিপদের বিরুদ্ধে সমগ্র শক্তিকে সংহত করুন – নির্বাচনের লক্ষ্যে সমগ্র শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করুন!